সেতু ভেঙে পড়ে আছে ‘বাহাদুরের’ উপর
স্টাফ রিপোটার: মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় বাল্কহেডের ধাক্কায় ভেঙে যাওয়া সেতু এখনো সংস্কার করা হয়নি। সেতু ভেঙে আটকে পড়া বাল্কহেডটিও সরানো হয়নি। এর ফলে লৌহজং ও সিরাজদীখান উপজেলায় যাতায়াতের অন্যতম পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন দুই পারের বাসিন্দারা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ২০০৭ সালে ইছামতীর শাখা নদীর পোড়াগঙ্গা খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর পর থেকে দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ এই সেতু দিয়ে চলাচল করেন।
গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজদীখানের মধ্যপাড়া ইউনিয়নে আদাবাড়ী ধামালিয়া বাজারসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত সেতুটি বাহাদুর-২ নামে একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ভেঙে যায়। এর পর থেকে ভাঙা সেতুর নিচে আটকে পড়ে আছে বাল্কহেডটি। রোববার পর্যন্ত ভাঙা অংশ অপসারণ করা হয়নি। সেতুর বিষয়ে এলজিআরডির লোকজন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৭ সালে সেতু নির্মাণ করা হলেও ২০১৫ সালে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে পিলারগুলো সংস্কার করা হয়। তবে সংস্কারের পরও পিলার ও সেতুর রাস্তায় নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এ ছাড়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাল্কহেড চলাচল করে প্রায়ই সেতুটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছিল।
সিরাজদীখানের ধামালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়েশা খাতুন বলে, ‘আমাদের বাড়ি ব্রিজের ওই পারে লৌহজং উপজেলায়। ব্রিজ ভেঙে পড়ায় স্কুলে আসা-যাওয়ায় আমাদের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখন নৌকায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। খুব ভয় লাগে ছোট এসব নৌকায় করে আসতে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লাসে যেতে পারছি না।’
তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আমরিন আক্তার বলে, ‘ঘাটে ছোট দুটি নৌকা দিয়ে আমরা শিক্ষার্থীরা চলাচল করছি। বাবা কাজ ফেলে আমাকে এখন স্কুলে নিয়ে যায় এবং বাসায় নিয়ে আসে। বাবার কাজে অনেক সমস্যা হচ্ছে। চার দিন হলেও ব্রিজটি ঠিক করার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’
সেতুর দুই পারের বাসিন্দারা জানান, সেতু ভেঙে পড়ায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুটি মহাবিদ্যালয় ও ছয়টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুই উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সমস্যায় পড়েছে।
মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাজি করিম শেখ জানান, সেতু ভেঙে পড়ার পর থেকে সিরাজদীখান উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের ধামালিয়া, নয়াবাড়ী, ধাইরপাড়া, কড়ারবাগ, মিঠুসার, ইসলামবাগ, কালপাড়া, হুগলী, রসকাঠী, ফুলকুচিসহ ১৫ গ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এলজিইডির সিরাজদীখান উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফ মাহমুদ জানান, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ওই নৌপথে বাল্কহেড চলাচল করছে। এর আগেও বিভিন্ন বাল্কহেড সেতুটিকে ধাক্কা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় সেতুটি অপসারণ করে নতুনভাবে প্রকল্প গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এলজিইডির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান জানান, মামলার ভয়ে বাল্কহেড মালিক পালিয়ে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সিরাজদীখান থানায় মামলা করবেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। সাত দিনের মধ্যে বিকল্প মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিগগিরই ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে।