আজ ২৮ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ৭১তম জন্মদিন।
১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। জন্মদিনটি আওয়ামী লীগ জাঁকজমকভাবে পালন করবে না। মানবিক রোহিঙ্গা ইস্যু ও পরপর বন্যার কারণে দেশের মানুষের কথা বিবেচনা করে এবারের জন্মদিন আড়ম্বর পরিবেশে হবে না বলে আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য কামনায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ও রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। এ ছাড়া সারা দেশের প্রার্থনালয়ে প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আনন্দ শোভাযাত্রা করবে বেলা ১১টায়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ আলোচনা সভা, অর্ধদিবস মিলাদ মাহফিল, স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি ও রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ বিতরণ করবে। এ ছাড়া সভা, সেমিনার, ত্রাণ বিতরণ ও রোহিঙ্গাসহ দেশের দরিদ্রদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবে।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ইডেন কলেজের নির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী, তিনবার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা এবং ৩৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কেটেছে। কারাগারে বাবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের সময় অনেক রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ হাসিনা। দলের খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা পৌঁছে দিয়েছেন নেতাদের কাছে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের। তাঁর সফল দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ তিন-তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে।
এদিকে গত কয়েক বছরের মতো এবারের জন্মদিনেও শেখ হাসিনা দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিবছরই শেখ হাসিনার জন্মদিন কাটে দেশের বাইরে। প্রতিবছরই সেপ্টেম্বরের এই নির্ধারিত সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রেই থাকতে হয়।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা জার্মানিতে ছিলেন। এরপর জার্মানি থেকে ভারতে এসে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে থাকেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরেন।
দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক চ্যালেঞ্জিং জীবন। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তাঁকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে।
আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বারবার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হন। তাঁর ওপর গুলি, বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তাঁকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি কারানির্যাতন ভোগ করেন।
টানা ৩৭ বছর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই সময় দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বন্ধুকন্যা হয়ে ওঠেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ১৯৮৬ সালে, ১৯৯১ সালে এবং ২০০১ সালের সংসদে তিনি বিরোধী দলের নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপরিচালনায় সফলতার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নানা পুরস্কার ও সম্মানসূচক ডিগ্রিতে ভূষিত হন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক কর্মব্যস্ত জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থও রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’, ‘ওরা টোকাই কেন’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’ ইত্যাদি।