বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় টিকফা বৈঠক আজ সোমবার ওয়াশিংটনে শুরু হচ্ছে। দুদিনব্যাপী বৈঠকে যোগ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছে। প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র ও শ্রম সচিব অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ডিলানি। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সই হয়।এই চুক্তির আওতায় দুদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয় পর্যালোচনা করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে একবার ঢাকায় এবং পরের বার ওয়াশিংটনে টিকফা বৈঠক হওয়ার কথা। তার আওতায় গত বছর ঢাকায় প্রথম টিকফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এবার দ্বিতীয় বৈঠক তাই ওয়াশিংটনে হচ্ছে।ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, ওয়াশিংটনে ২৩ নভেম্বর টিকফা বৈঠক এবং পরের দিন মার্কিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো আমরা উত্থাপন করব। এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।এদিকে, রোববার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক মিডিয়া নোটে বলা হয়েছে, ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মিশন উপ-প্রধান ডেভিড মিলি দ্বিতীয় টিকফা সভায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন। তিনি বলেছেন, এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করাই টিকফার লক্ষ্য। এই ক্ষেত্রে নতুন অনেক সম্ভাবনাময় দিক রয়েছে যেমন- ওষুধ শিল্প থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ ও তথ্য প্রযুক্তি।টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবে বলে আশা করেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে ঢাকায় মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, জিএসপি ফিরে পাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কর্ম পরিকল্পনা দিয়েছে, তার বেশ কিছু বাস্তবায়ন হলেও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিমত, ভবন ও অগ্নি নিরাপত্তায় অগ্রগতি হলেও শ্রম অধিকার তথা প্রত্যেক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের তালিকাযুক্ত ডাটাবেজ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এই কারণ ছাড়াও অন্য একটি কারণে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি পুনর্বহালে সময় নেবে। সেটি হল- ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশ শর্তযুক্ত সাসটেইনেবল কমপ্যাক্ট নামের চুক্তি করেছে। এই চুক্তির শর্ত কতটা বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ, তার পর্যালোচনা হবে নতুন বছরের শুরুর দিকে। ইইউ পর্যালোচনা শেষে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় তা দেখার পর যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি, জিএসপি পুনর্বহাল প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ বিধায় মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।রানা প্লাজা ও তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে তা ফিরে পেতে ১৬ দফা শর্ত দেয়। টিকফা বৈঠকে অবশ্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অন্য অনেক ইস্যুতে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মিডিয়া নোটে বলা হয়, টিকফা সই করার ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা যাবে। এই বছরের টিকফা বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরও বাড়ানোর জন্য কাজ করা হবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ওয়াশিংটনে আজ দ্বিতীয় টিকফা বৈঠক শুরু
Share!