‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি আরাফাত ময়দানে
শুরু হলো পবিত্র হজ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ এটি। আজ বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের পর থেকে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ২০ লাখ হাজি। তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এবার এক লাখ ২৭ হাজার ২২৯ জন হজ পালন করছেন।
ধবধবে সাদা দুই টুকরো ইহরাম পরিহিত অবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় লাখ লাখ হাজির কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি মাতা লাকা ওয়ালমুল লা শারিকালাক’। এর বাংলা অর্থ হচ্ছে, ‘আমি হাজির। হে আল্লাহ আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধুই তোমার। সব সাম্রাজ্য তোমার।’
ফজরের নামাজের পর থেকে আরাফাত ময়দান ও মসজিদ নামিরায় জড়ো হয়েছেন লাখ লাখ হাজি। এর পর জোহর নামাজের আগে হজের খুতবা পাঠ করবেন মক্কার গ্র্যান্ড ইমাম। খুতবা পাঠ শেষে হাজিরা জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহতায়ালার জিকির-আজকারে ব্যস্ত থাকবেন।
সূর্যাস্তের পর হাজিদের গন্তব্য হবে মুজদালিফার দিকে। সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁরা মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে সেখানে রাতযাপন করবেন। মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করে শুক্রবার মিনায় ফিরে যাবেন।
হজের দ্বিতীয় দিন ১০ জিলহজ শুক্রবার মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডানদিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। হাজিরা মক্কায় ফিরে কাবা শরিফ ‘তাওয়াফ’ ও ‘সাঈ’ (কাবার চারদিকে সাতবার ঘোরা ও সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানো) করে আবার মিনায় ফিরে যাবেন।
জিলহজের ১১ তারিখ শনিবার মিনায় রাতযাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত হাজিরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করা সুন্নত।
পরদিন ১২ জিলহজ রোববার মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। আর মক্কায় পৌঁছার পর কাবা শরিফে স্থানীয়রা ছাড়া হাজিরা বিদায়ী তাওয়াফ, অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাতবার চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে হাজিরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজ পালন।
এবার হজে মক্কা নগরীসহ আরাফাত মিনা মুজদালিফায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাজিদের পরিচয় নিশ্চিতের জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও ইলেকট্রনিক ব্রেস লাইট সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি হাজিদের পিপাসা নিবারণের জন্য ১৫ লাখ গ্যালন জমজমের পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।