ভাগ্য বদল আমড়া বিক্রি করে
সালেহউদ্দিন সোহেলঃ ‘আমড়া কাঠের ঢেঁকি’ প্রবাদে অপদার্থ হিসেবে প্রচলন থাকলেও মৌসুমি ফল আমড়ায় আছে ভিটামিন সি। এই ফলটি নিয়মিত খাওয়া না হলেও এক শ্রেণির ভ্রাম্যমাণ হকারের মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে যাতায়াতের সময় খাওয়া হয় বেশি। এমন ভ্রাম্যমাণ হকারদের গ্রুপ রয়েছে রাজধানীর পল্টন মোড়, জাতীয় ঈদগাহের সামনে কদম ফোয়ারা মোড় ও মৎস ভবন মোড় পর্যন্ত ব্যস্ততম তিনটি মোড়ে। মঙ্গলবার সরেজমিনে কদম ফোয়ারা মোড়ে কথা হয় ভ্রাম্যমাণ হকারদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে হাইকোর্টের দিকে হেঁটে যেতেই যাত্রী ছাউনীর পর রাস্তার উপর দেখা যায় বেশ কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ হকার আমড়া কেটে বড় প্লেটে সাজাতে ব্যস্ত। কথা বলে জানা যায়, হাইকোর্ট, কদম ফোয়ারা, পল্টন মোড় ও মৎস ভবন মোড়ে যানজটে আটকা গাড়িতেই এরা বিক্রি করে আমড়া। এদের রয়েছে একতা, ২০জন হকারের দেখা-শোনার জন্য দলপতি রয়েছেন একজন। হকার দলের কারো কোনো সমস্যা হলে ছুটে যান দলপতি খোকন- এমনটাই জানালেন হকার গ্রুপের সদস্য তরুণ।
তরুণ ১০ বছর ধরে এখানে হকার হিসেবে ব্যবসা করেন। নেত্রকোনার সদর থানায় অরুণের জন্ম, বাবা কৃষক, অভাব অনটনের সংসারে পড়ালেখা প্রাইমারীর গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিলো, ১২বছর বয়সেই পরিচিত এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে ঢাকায় আসেন তরুন, সেই থেকে পল্টন মোড়ের হকার। কেমন চলছে ব্যবসা জানতে চাইলে তরুন নতুন সময়কে বলেন, আমড়া বিক্রি খুব ভালো চলছে। বছরের ছয় মাস আমড়া বিক্রি হয়, আর অন্য সময় শশা, গাজর ও খিরা বিক্রি করি, তবে আমড়া বিক্রিতে লাভ ভালো হয়। ভোর ৫টায় পুরান ঢাকার শ্যামবাজার থেকে আমড়া নিয়ে আসি পাইকারি দরে আর এখানে এসে আমড়ার চামড়া ফেলে ধুয়ে বড় গামলায় সাজিয়ে বিক্রি করি। প্রতি পিচ ৩টাকার মত খরচ পড়ে আর বিক্রি করি ৫টাকা করে, প্রতি দিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০পিচ আমি বিক্রি করি। মাসে কেমন টাকা আয় হয়- জানতে চাইলে তরুন বলেন ২০ থেকে ২৫ হাজারের মত থাকে। ২০ পরিবার এই হকার গ্রুপে তরুন ছাড়াও রয়েছে আশিক, মোজাম্মেল, রবি, শিপন, রমজান, সুমন, সিদ্দিক, ইমদাদুল, তরিকুল। সবার বয়স প্রায় ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
কথা হয় আরেক আমড়া বিক্রেতা আশিকের সঙ্গে। আশিক বলেন, আমার গ্রামে (নেত্রকোনায়) মা-বাবা, ভাই-বোন থাকে, আমি এখানে মগবাজার আমবাগান এলাকায় একটা ম্যাচে থাকি, আমড়া বিক্রি ভালো হচ্ছে, প্রতিদিন আমার ৪০০টির মত বিক্রি হয়, আর মাসে আয় হয় ২০ হাজার টাকার মত, আমার খাওয়া থাকা বাবদ পাঁচ/ছয় হাজারের মত খরচ হয় আর বাকি টাকা দেশে পাঠাই, সব মিলিয়ে ভালো আছি।
হকার পুনর্বাসন সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু তালেব মো. মোয়াজ্জিন নতুন সময়কে বলেন, ইতোমধ্যে হকার পুনর্বাসনে আমরা কাজ শুরু করেছি, নগরীতে হকার মুক্ত করার অংশ হিসেবে সরকারী খরচে হকারদের বিদেশ পাঠানোর বিষয়টি পক্রিয়াধীন, আমরা তালিকা করার মাধ্যমে হকারদের উন্নয়নে কাজ করবো।