শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল
সাত খুন পরিকল্পিত, আসামিদের রেহাই দেওয়ার সুযোগ নেই
এ,কে,এম শফিকুল ইসলামঃ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের ঘটনা পরিকল্পিত। এর সঙ্গে জড়িতদের রেহাই দেওয়ার সুযোগ নেই। সাত খুন মামলায় আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপনকালে অ্যাটর্নি জেনারেল এ মন্তব্য করেন। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি ভবানী প্রসাদসিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। যুক্তি উপস্থাপনকালে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। যাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা সবাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁদের দায়িত্ব ছিল সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু তাঁরা সেটি না করে নিরীহ সাতজনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছেন। বাহিনীর সদস্য হয়ে তাঁরা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছেন। এর চেয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড আর হতে পারে না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে র্যাবের উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন, যাঁরা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী থেকে এই বাহিনীতে এসেছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। ওই সব তথ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এ কারণেই বিচারিক আদালত তাঁদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন। নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলামের জবানবন্দি আদালতে তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাতজন ব্যক্তিকে অপহরণের পর শহীদুল ইসলাম ও নজরুলের স্ত্রী নারায়ণগঞ্জ র্যাব অফিসে যান। সেখানে গিয়ে নজরুলকে উদ্ধারে র্যাব-১১-এর তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার তারেক সাঈদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কিন্তু তারেক সাঈদ কোনো ধরনের আশ্বাস না দিয়ে তাঁদের বলেছিলেন, ‘স্থানীয় এমপির ওখানে গিয়ে নজরুলের খোঁজ করেন।’ এতেই প্রমাণিত হয় যে তারেক সাঈদ এ ঘটনায় জড়িত। কারণ, অপরাধীদের মানসিকতা হচ্ছে অপরাধ করে দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো। যদি তারেক জড়িতই না থাকতেন, তাহলে শহীদুলকে বলতে পারতেন, ‘ধৈর্য ধরেন, আমরা চেষ্টা করছি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তারেক র্যাব-১১-এর সিইও ছিলেন। তাঁর অধীনস্থরা এত বড় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করবে আর তিনি জানবেন না, এটা অবিশ্বাস্য। ফলে তারেককে এ ঘটনার দায় থেকে রেহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুনানি শেষে এ মামলার কার্যক্রম আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করেন । এর আগে গত ২২ মে সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনসহ আসামিদের নিয়মিত ও জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। গত ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেন, তারেক সাঈদসহ আসামিরা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন। ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি নয় আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন—নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। ঘটনার একদিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।