যেসব নারীকে টার্গেট করে ধর্ষণ-হত্যা চালাত খুনিরা
এ,কে,এম শফিকুল ইসলামঃ ধারাবাহিক ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত সন্দেহে রাজধানীতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করেছে, খালি বাসায় একা থাকা নারীদেরই মূলত টার্গেট করত ধর্ষক ও খুনিরা। ধর্ষণ ও খুন শেষে বাসার সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যেত তারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন আহেমদ।গ্রেপ্তারকৃতরা হলো জামাল খান পাটোয়ারী, রাজীব হাওলাদার, মো. জাকির শিকদার, মো. রফিকুল ইসলাম শামীম ও মো. মফিজ উদ্দিন সাগর।গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত টানা অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, সাভার ও ফতুল্লা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা পারুল বেগম ও ফরিদা বেগম নামের দুই নারী ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করছে পুলিশ।এর মধ্যে গত ১৮ জুন রাতে কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইন থেকে পারুল বেগমের ও ১০ জুলাই একই এলাকা থেকে ফরিদা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়।ডিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, জামাল খান পাটোয়ারী ও রাজীব হাওলাদারকে পারুল বেগম ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এবং মো. জাকির শিকদার, মো. রফিকুল ইসলাম শামীম ও মো. মফিজ উদ্দিন সাগরকে ফরিদা বেগম ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইলসহ বিভিন্ন জিনিসও মামলার আলামত হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
‘পরিচয়ের সূত্রে খালি বাসায় হানা’ গ্রেপ্তার জামাল ও রাজীবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি ফরিদ উদ্দিন আহেমদ জানান, পারুল বেগম একটি কীটনাশক ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করতেন। সেই কাজের সুবাদেই পারুলের সঙ্গে রাজীবের পরিচয় হয়। পারুলের স্বামী লিটন পেশায় একজন গাড়িচালক। তিনি কাজের সুবাদে অধিকাংশ সময়ই বাসার বাইরে থাকতেন।এটা রাজীব ভালো করেই জানত। সে তার বন্ধু জামালাকেও বিষয়টি জানায়। তারপরই দুজন পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৮ জুন ইফতারির পর পারুল বেগমকে ফোন করে তাঁর বাসায় যায় রাজীব ও জামাল। তারা বাজার থেকে আম, পেয়ারা, হালিম ও কোমল পানীয় স্পিড নিয়ে যায়। বাসায় ঢোকার আগেই হালিম ও কোমল পানীয়তে ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়। বাসায় গিয়ে কৌশলে পারুলকে সেই হালিম ও কোমল পানীয় খাওয়ানো হয়।পুলিশ কমিশনার আরো দাবি করেন, রাজীব ও জামাল অজ্ঞান অবস্থায়ই পারুলকে ধর্ষণ করে। পারুল আওয়াজ করার চেষ্টা করলে জামাল তাঁর গলা এবং রাজীব পা চেপে ধরে। এরপর পারুলকে হত্যা করে বাসা থেকে মোবাইল, স্বর্ণের অলংকার ও ঘরে থাকা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুজন।
‘একা থাকা নারী টার্গেট’ ফরিদা বেগম ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি ফরিদ উদ্দিন আহেমদ দাবি করেন, ফরিদা একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। একই কারখানায় কাজ করত শামীম ও সাগর। ফরিদার স্বামী কিছুদিন আগে মারা যান। এর পর থেকে ফরিদা একাই বাসায় থাকতেন। আর এই বিষয়টি শামীম ও সাগর জানত। ধর্ষণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেই গত ৭ জুলাই রাত ১১টার দিকে শামীম, সাগর ও জাকির পোশাকশ্রমিক ফরিদার বাসায় যায়। একপর্যায়ে তিনজন মিলে ফরিদাকে ধর্ষণ করে।ফরিদা চিৎকার করার চেষ্টা করলে সাগর চাকু দিয়ে তাঁর মুখে আঘাত করে। আর শামীম শিলপাটা দিয়ে ফরিদার মাথায় আঘাত করে এবং জাকির গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর তিনজন ফরিদার ঘরটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। ঘটনার চার দিন পর ফরিদার লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান ডিসি ফরিদ উদ্দিন।