Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

গোপালগঞ্জে ধান কাটতে শ্রমিক আর নৌকা পাওয়া এখন সোনার হরিণ

 গোপালগঞ্জে ধান কাটতে শ্রমিক আর নৌকা পাওয়া এখন সোনার হরিণ  

গোপালগঞ্জে শ্রমিক সংকটে বোরো চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। মাঠের পর মাঠ বোরো ধান পেকে থাকলেও শ্রমিক সংকটে পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। মৌসুমে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষকেরা বোরো আবাদ করে মৌসুমে সেই ধান শ্রমিক সংকটে ঘরে তোলা নিয়ে রিতিমত হিমসিম খা”েছন তারা। বেশি টাকা দিলেও শ্রমিক মিলছেনা তাদের। অনুকুল আবহাওয়া আর সটিক সময়ে সার ও বীজ পেয়ে তাদের ফসল অনেক ভাল হয়েছিলো। বর্তমানে মাঠের পর মাঠ তাদের পাকা ধান পেকে আছে। শ্রমিক অভাবে চাষীরা ধান কেটে সময় মত ঘরে তুলতে পারছেন না। হাটগুলো থেকে শ্রমিক আনতে যেন প্রতিযোগিতায় নামতে হ”েছ। শ্রমিক যেনো সোনার হরিণের মত মূল্যবান হয়ে পড়েছে। এক জন শ্রমিককে দিনে তিনবেলা খেতে দিয়ে ৮’শ থেকে সাড়ে ৮’শ টাকা দিয়ে হ”েছ। টাকা দিলেও শ্রমিক পাওয়া যা”েছ না বলে জানান বোরো চাষীরা। এদিকে এত চড়া দামে শ্রমিক দিয়ে পাকা ধান ঘরে তুলতে পারলেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধান উৎপাদনে তাদের লোকসান হবে বলে জানান তারা। কৃষকের ধারণা,শ্রমিক সংকটে তাদের উৎপাদিত ধান সঠিক সময়ে ঘরে নিতে পারবেন না। বর্তমানে জেলার ৬০% জমির ধান কাটা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এ মাসের মধ্যে জেলার শতভাগ ধান কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর। চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ৭৩ হাজার ৫ শত  হেক্টোর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী এক একর ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলতে ২৫ জন শ্রমিক প্রয়োজন হয়। যে পরিমান বোরা আবাদ হয়েছে সেই হিসাবে মোট ধান কর্তন করে ঘরে তুলতে ২৫ লক্ষ ৫১ হাজার ৫’শ ১০ জন শ্রমিক প্রয়োজন। একজন শ্রমিকের একদিনের মুজুরি ৮’শ টাকা। সেই হিসাবে জেলার বোরো ধান কর্তন করতে চাষিদের ব্যায় হবে ১,৭৮৬,০৫৭,০০০ টাকা। গোপালগঞ্জ কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া এলাকার কৃষক আমিনুর সরদার জানান, তিনি চলতি মৌশুমে ১ একর ৩৪ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। তার  জমির সব ধান পেকে মাঠে পড়ে আছে। বিভিন্ন জায়গা তিনি শ্রমিক খুঁজেও শ্রমিক পাননি। তিনি কোন শ্রমিক না পেয়ে বাধ্য হয়ে তার আত্মীয়কে নিয়ে নিজে মাঠে এসে ধান কাটছেন। তিনি আরও বলেন, যে কোন সময় যদি ঝড় বৃষ্টি হয় তাহলে তার জমির সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া টানা বর্ষন ও জোয়ারের পানিতে ফসলের জমি জলমগ্ন হওয়ার কারনে নৌকা ছাড়া ধান নিতে পারছেন না কৃষকেরা। চড়া দামে পুরানো নৌকা কিনতে হ”েছ তাদের । আবার টাকার অভাবে অনেকেই নৌকা কিনতে পারছে না । কোটালিপাড়া উপজেলার হিরন এলাকার কৃষক সাগর শেখ জানান, তিনি প্রতি বছর বোরো আবাদ করেন। এ বছরও প্রায় ২ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে জমির ৮০ ভাগ ধান পেকে গেছে। কিš‘ শ্রমিক অভাবে এক শতক জমির ধানও এখন পর্যন্ত ঘরে তুলতে পারেনি। তিনি আরও জানান, এক একর জমির ধান কাটতে ১২ থেকে ১৪ টা শ্রমিক লাগে। সেই ধান বিছালি বেঁধে ঘরে নিতে আরও ১৫ জন শ্রমিক দরকার হয়। মোট মিলে এক একর জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে ৩০ থেকে ৩২ জন শ্রমিক প্রয়োজন হয়। বর্তমান সময়ে একটি শ্রমিকের একদিনের মূল্য তিন বেলা খেতে দিয়ে ৭’শ থেকে সাড়ে ৭’শ টাকা। এক জন শ্রমিকের পিছনে একদিনে সব মিলে ৮’শ টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়। শুধুমাত্র এক একর জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে তাদের খরচ হ”েছ ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এত চড়া দামে শ্রমিক দিয়ে ধান ঘরে তুললে বোরো উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। সব মিলে তাদের কোন লাভ থাকবে না। তার ধারণা এ বছর শ্রমিক সংকটে তিনি তার সব জমির ফসল ঘরে তুলতে পারবেন না। জমিতেই তার ধান নষ্ট হয়ে যাবে। সদর উপজেলার কাঠি এলাকার কৃষক রমজেদ শেখ জানান, চলতি মৌশুমে তাদের বিলের ধান খুব ভাল হয়েছিল। কিš‘ কয়েক দিন পূর্বে কালবৈশাখি ঝড়ে তাদের ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ধান এলোমেলো ভাবে মাটিতে পড়ে আছে। মাটিতে পড়া ধান কাটতে অনেক সময় লাগছে। এতে শ্রমিক খরচও বেশি হ”েছ। তিনি আরও জানান, সরকার ৯৬০ টাকা ধানের দাম নির্ধারণ করলেও সাধারণ কৃষকেরা সেই ধামে ধান বিক্রয় করতে পারে না। তার দাবি কম পক্ষে ১ হাজার টাকা করে দাম দিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হোক। গোপালগঞ্জ কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বলেন, বোরো ধান একটি ঝুঁকিপূর্ণ ধান। এই সময় আবহাওয়ার অব¯’া ভাল থাকে না। যে কোন সময়  প্রাকৃতিক দূর্যোগ হতে পারে। জেলা প্রায় শতভাগ জমির ধান পেঁকে গেছে। ধান পাকা শুরু থেকে তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছে জমির ধান আশি ভাগ পেকে গেলে কৃষকেরা যেন জমি থেকে ধান কেটে নেন। তিনি আরও জানান, সঠিক সময়ে কৃষকেরা সার ও বীজ পেয়ে খুব খুশি। বরাবরের ন্যায় এ বছরও গোপালগঞ্জে বোরো আবাদ খুব ভাল হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের মধ্যে চাষিদের সম¯’ ধান ঘরে তুলতে পারবেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top