যাতে আর কেউ যেন জঙ্গি হতে সাহস না পায় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি দমনে এমন শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে আর কেউ এ পথে যাওয়ার সাহস না দেখায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দপ্তরে র্যাব ফোর্সেসের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দরবারে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। র্যাব সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৈতিক স্খলন যেকোনো বাহিনীর মনোবল দুর্বল করে দেয়। মনে রাখবেন, জনগণের পয়সায় আমাদের-আপনাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। আমরা সবাই জনগণের সেবক। সেই জনগণ যেন কোনোভাবেই নিগৃহীত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, পুলিশের আইজি মো. শহীদুল হকসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী র্যাব সদর দপ্তরে এসে পৌঁছালে মেজর মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে র্যাব ফোর্সেস অনার গার্ড প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। অপরাধ ও জঙ্গি দমনে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশের র্যাব ইউনিট গঠন করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি এবং আনসার সদস্যদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস, জঙ্গি, চরমপন্থী দমনসহ সুন্দরবনের জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ এবং দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী দমনেও র্যাব কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। র্যাব সদস্যদের একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা না থাকলে দেশে বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করাই র্যাব সদস্যদের মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আইনকানুন এবং নিয়ম-নীতি মেনে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন—এটাই আমার প্রত্যাশা। আট বছর ধরে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আজ আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী র্যাব সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, এ বাহিনীর নতুন নতুন ব্যাটালিয়ন উদ্বোধন করা হয়েছে। র্যাবের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। র্যাব সদর দপ্তর এবং র্যাব ট্রেনিং স্কুলসহ সব ব্যাটালিয়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। র্যাব সদর দপ্তর, র্যাব-১৩ ও ১৪ ব্যতীত সব ব্যাটালিয়নের অবকাঠামো নির্মাণকাজ একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত র্যাবের বাজেট প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। অপরাধী শনাক্ত করতে র্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বাহিনীতে অস্পষ্ট ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ, টেলিফোন সেট ট্র্যাকিংয়ের যন্ত্রসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। র্যাবের অপারেশনাল শক্তি বৃদ্ধি করতে দুটি হেলিকপ্টারসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন বরাদ্দ দিয়েছি আমরা। ফলে র্যাব জল, স্থল ও আকাশপথে দ্রুত আভিযান কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে। পরিণত হয়েছে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে। র্যাব ফোর্সেসের বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা এবং র্যাব স্পেশাল ফোর্সেসের ওপর অনুষ্ঠানে দুটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে সুন্দরবনে র্যাবের কর্মকাণ্ড নিয়েও একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে র্যাব-৯-এর জন্য নবনির্মিত হেডকোয়ার্টার্স ভবনেরও ফলক উন্মোচন করেন।