প্রাথমিকভাবে তাঁরা হাওরের পানিতে ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের নমুনা পাননি
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে তাঁরা হাওরের পানিতে কোনো ধরনের ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের নমুনা পাননি; বরং দেশভিত্তিক ইউরেনিয়ামের সাধারণ যে সূচক, হাওরে তার চেয়ে কম রয়েছে। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহ করে তাঁরা ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। সম্প্রতি অকাল বন্যায় হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর সেখানে মাছ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীর মড়ক লাগে। কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এর পেছনে ইউরিনিয়াম বা অন্য কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। পরমাণু শক্তি কমিশনের এ পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে সেই আশঙ্কা ভিত্তিহীন হতে যাচ্ছে। তাহলে মাছ মরছে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে পরমাণু শক্তি কমিশনের ধারণা, ধানচাষে সার ও কীটনাশক ব্যবহার এর কারণ হতে পারে। এ ছাড়া পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ধান পচেও পরিবেশ বিরূপ হয়েছে, যাতে মাছ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণী মরে যাচ্ছে। আজ রোববার সকালে সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে পরমাণু শক্তি কমিশনের ফিজিক্যাল সায়েন্স অ্যাটোনমিক্যাল কমিশনের সদস্য ড. দিলীপ কুমার সাহা এসব কথা বলেন। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আরো রয়েছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. দেবাশীষ পাল ও বাংলাদেশ কেমিস্ট্রি ডিভিশনের প্রধান ড. বিলকিস আরা বেগম। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধিদল সুনামগঞ্জে পৌঁছায়। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ফিজিক্যাল সায়েন্স অ্যাটোনমিক্যাল কমিশনের সদস্য ড. দিলীপ কুমার সাহা বলেন, ‘আপনারা যেটা আশঙ্কা করছিলেন, যে এখানে ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় কোনো পদার্থের ইফেক্টের জন্য এই মাছগুলো মারা গেছে। আমরা রেডিও অ্যাকটিভি পরিমাপের যে মিটার, সেটা নিয়া আসছি। আমরা খুব ক্লোজলি, পানি ও কচুরিপানার খুব কাছ থেকে সেই সার্ভে মিটার দিয়ে রেডিও অ্যাকটিভিটি পরিমাপের চেষ্টা করেছি। তাতে আমরা যেটা দেখেছি, বাংলাদেশের নরমাল যে ব্যাকগ্রাউন্ড লেবেল, রেডিও অ্যাকটিভিটির মিনিমাম যে ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার কথা, তার থেকেও অনেক পরিমাণের লেবেল এখানে পাওয়া গেছে। এর অর্থ হলো, এখানে কোনোভাবেই ইউরেনিয়াম বা অন্য কোনো রেডিও অ্যাকটিভির জন্য এখানে মাছগুলো মরে নাই। যেটা পেপারে আসছে বা আরো অন্য সংগঠন পরীক্ষা করে বলছে… এখানে সার ব্যবহার করা হয় ধানচাষের জন্য বা কীটনাশক দেওয়া হয়। এগুলো পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে হয়তো অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করছে, যার ফলে পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয়তো অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। এ জন্য মাছগুলো মারা গেছে। ড. দিলীপ কুমার সাহা আরো বলেন, ‘আর পানির ভেতরে একটা জিনিসের পচন হলে, সেখানে দুর্গন্ধ বের হতেই পারে। রং পরিবর্তন হতেই পারে, এর জন্য হয়তো এটা হয়েছে। পরমাণু শক্তি কমিশনের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার হাওরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে যথেষ্ট পরিমাণের নমুনা, যেমন—পানি, মরা মাছ, মরা হাঁস, কচুরিপানা, সেডিমেন্ট সংগ্রহ করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়েছে। আজকেও আমরা আরো জায়গায় পর্যবেক্ষণ করব। পরে ঢাকায় গিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবেন। তখন আসলে প্রকৃত অবস্থাটা জানা যাবে বলে মন্তব্য করেন ড. দিলীপ। এদিকে, গতকাল সারা দিন বিভিন্ন হাওরে কাজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল পানি ও জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁরাও তাঁদের ল্যাবে নিয়ে বাকি পরীক্ষা করে দেখবেন। একইভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দলটিও তিন দিন কাজ শেষে সিলেটে ফিরে গেছে। দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাওরের বাঁধ নির্মাণের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। তার অনুসন্ধানে এই তিন দিন কাজ করেছেন তাঁরা। দুদকের প্রতিনিধিদল বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ সংগ্রহ করেছে। যাঁরাই অভিযোগ দিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে অভিযোগ সংগ্রহ করা হয়েছে। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রামাণিত হয়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।