আওয়ামী লীগ নেতার সই মৃত্যুর ১০ মাস পরও
রাজশাহীতে গুলিতে নিহত জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবসায়ী জিয়াউল হক টুকুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। টুকুর স্ত্রী নুরুন্নাহার এই অভিযোগ করেছেন। নুরুন্নাহারের দাবি, মারা যাওয়ার ১০ মাস পর টুকুর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স প্রমিনেন্ট কনস্ট্রাকশন’-এর নামে এই চেক ইস্যু করেছিল রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সরঞ্জাম শাখা। চেক উত্তোলনের পর টুকুর প্রতিষ্ঠানের নামে মেঘনা ব্যাংকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। টুকুর বড় ভাই সাচ্চু ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক সেজে ভুয়া অ্যাকাউন্ট করেন। গত বছরের ২৪ এপ্রিল নগরীর গোরহাঙ্গা এলাকায় নিজের চেম্বারে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রশাসক আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল হক টুকু। ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে গত ২ এপ্রিল টুকুর স্ত্রী নুরুন্নাহার রেলওয়ের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখার নির্বাহী পরিচালক, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার ও মেঘনা ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স প্রমিনেন্ট কনস্ট্রাকশনের যাবতীয় দায়িত্ব পান তিনি (নুরুন্নাহার)। গত বছরের ৬ জুন আদালতের মাধ্যমে তিনি জিয়াউল হক টুকুর ওয়ারিশ হিসেবে ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব পান। টুকুর স্ত্রীর দাবি, চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি জিয়াউল হক টুকুর প্রতিষ্ঠানের নামে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখার অধীনে একটি টেন্ডারের ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯০ টাকার একটি বিল পাস হয়, যার বই নম্বর ১০৬০২৬, চেক নং ৫৩০১২৭৬। কিন্তু ওই চেকটি তাঁকে (নুরুন্নাহার) দেওয়া হয়নি। চেকটি প্রয়াত টুকুর স্বাক্ষর দিয়ে সরঞ্জাম শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এর পর মেঘনা ব্যাংকে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া হিসাব খুলে টাকা তুলে নেওয়া হয়। নুরুন্নাহার বলেন, ওয়ারিশ হিসেবে প্রমিনেন্ট কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা পরিচালনায় আদালতের আদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে। সে আদেশবলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখা থেকে ব্যবসায়িক কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য অনুমতি দিয়ে গত বছরের ১২ জুন তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু ওই বিলের চেক তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামে করা হলেও প্রয়াত টুকুর স্বাক্ষর নিয়ে তা অন্যজনকে দেওয়া হয়েছে। নুরুন্নাহার অভিযোগ করে বলেন, এই জালিয়াতির সঙ্গে রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখা ও মেঘনা ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জড়িত। কোনো যাচাই-বাচাই ছাড়াই মেঘনা ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাঁর প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খোলার সুযোগ দিয়ে টাকা উত্তোলনের পর তা আবার বন্ধ করে দিয়েছেন। নুরুন্নাহার বলেন, চেক জালিয়াতির অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি হুমকির মধ্যে রয়েছেন। অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত ৪ এপ্রিল বিষয়টি লিখিতভাবে পুলিশকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উপ-অর্থ উপদেষ্টা শ্যামলী রানী দাস জানান, জিয়াউল হক টুকুর স্ত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সে কমিটির প্রধান তিনি। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না। মেঘনা ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি গত ১৯ এপ্রিল এ শাখায় যোগদান করেছি। শুক্রবার বিষয়টি শোনার পর খোঁজ-খবর নিয়েছি। প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দাখিল করে ব্যাংকের নিয়মের মধ্যেই জিয়াউল হক টুকুর বড় ভাই আজমুল হক সাচ্চু ওই হিসাব খুলেছিলেন, যেখানে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯০ টাকার চেক জমা দেওয়া হয়েছিল। পরে সে টাকা তিনি তুলে নিয়েছেন। এ বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যও জানেন। জানতে চাইলে আজমুল হক সাচ্চু বলেন, ‘এটি পারিবারিক বিষয়। টুকুর কাছ থেকে সুজন নামে এক ব্যক্তি ১৩ লাখ টাকা পেতেন। কিন্তু টুকুর স্ত্রী সে টাকা দিতে অস্বীকার করেছে। সে কারণে পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্তে টাকা তুলে সুজনকে দেওয়া হয়েছে। সুজনের পরিচয় ও ফোন নম্বর চাইলে এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন আজমুল হক সাচ্চু। বিষয়টি নিয়ে রোববার বিকেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ফজলে হোসেন বাদশা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবেন বলে দাবি করেন তিনি। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, নুরুন্নাহারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।