‘একুশ’ নামে শিশুটি পরিবার পেল।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে একুশে ফেব্রুয়ারির ঠিক আগের রাতে তাকে পাওয়া যায় বলে শিশুটির নামকরণ করা হয় ‘একুশ’ নামে। কিন্তু অবহেলায় ময়লার স্তূপে ফেলে দেয়া এই নবজাতক শিশুটিকে পেতেই তৈরি হয়েছিল অনেকের প্রতীক্ষা। তার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কারা পেতে যাচ্ছেন- তা রীতিমত আদালতের মাধ্যমে ঠিক হয়েছে। এই দাবিতে মোট ১৬টি আবেদনের শুনানি হয়েছে। অত:পর বুধবার আদালত চারটি শর্তে চিকিৎসক জাকিরুল ইসলাম এবং শাকিলা আক্তার দম্পতির জিম্মায় দিয়েছে ‘একুশ’কে প্রতিপালনের দায়িত্ব।
‘একুশ’ এর জন্য প্রতীক্ষা
তাকে সন্তান হিসেবে পেতে ছিল দীর্ঘ লাইন। নিঃসন্তান দম্পতি, সন্তান হারানো দম্পতি, এমনকি সন্তান আছে এমন বাবা-মায়েরাও আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে শিক্ষিকা, আইনজীবী, পুলিশসহ অনেকেই ছিলেন। শুনানি শেষে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত দায়রা জজ ও চট্টগ্রাম শিশু আদালতের বিচারক আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস মিস্টার ইসলামের পরিবারকেই এই দায়িত্ব দিলেন। এই পরিবারটি ১৯ বছর দরে নি:সন্তানহীন। আদালত বলেছে, যেহেতু এই দম্পতির সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব হবে না এবং তাদের আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে-সে বিবেচনায় তাদেরকেই এই দায়িত্ব দেয়া হল। তবে আদালত জানায়, স্থায়ীভাবে শিশুটির জিম্মা বা দত্তক দেয়া সম্ভব নয়। শুধু আঠারো বছর পর্যন্ত তার জিম্মা দেয়া হয়েছে।
‘সন্তানহীনতার কষ্ট ঘুচবে’
চিকিৎসক জাকিরুল ইসলাম, টেলিফোনে বলেন, এই শিশুটির দায়িত্ব পেয়ে তিনি ও তার স্ত্রী অত্যন্ত আনন্দিত। তাকে পেয়ে এই দম্পতির সন্তানহীনতার কষ্ট ঘুচতে যাচ্ছে বলে জানান মি. ইসলাম। তিনি বলেন,”নিজের সন্তান হিসেবে শিশুটিকে মানুষ করতে চাই। তবে কোনদিন যদি তার বাবা-মা ফেরত নিতে চায় তখন সেটা আমাদের জন্য অমানবিক হবে। কিন্তু আদালতের রায় তো মেনে নিতেই হবে” বলেন মি. ইসলাম।
কিভাবে পাওয়া গেল শিশুটিকে?
গত মাসের ২০শে ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার কাছাকাছি আবাসিক এলাকার একটি ভবনের পেছনে আবর্জনার স্তূপ থেকে শিশুটিকে রক্তমাখা অবস্থায় কয়েকজন তরুণ উদ্ধার করার পর পুলিশকে জানায়। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসা ও পরিচর্যা চলে।
একুশকে প্রতিপালনের চারটি বিশেষ শর্ত:
আদালত শিশুটিকে প্রতিপালনের জন্য চারটি বিশেষ শর্ত দিয়েছে। প্রথমত, শিশুটির জন্য ১০ লাখ টাকার শিক্ষা-বীমা করে সে সংক্রান্ত কাগজপত্র আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে। এরপর শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। দ্বিতীয়ত, তার বাবা-মা তাকে ফিরে পেতে চাইলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তাকে হস্তান্তর করতে হবে। তৃতীয়ত, তার সম্পর্কে নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে তথ্য জানাতে হবে আদালতকে। চতুর্থ, শিশুটির স্বার্থের পরিপন্থী কোন কাজ করা যাবে না।