১৯৭০ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাকিস্তানের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬২টি আসন ছিল পূর্ব-পাকিস্তানের। এ ১৬২টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে তৎকালীন আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসন পেয়ে জাতীয় সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক সরকার প্রধান রাষ্ট্রপতি আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে, পিলখানার ইপিআর হেডকোয়ার্টারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ ও ইকবাল হলে, পুরান ঢাকার নবাবপুর ও শাখারী বাজার এলাকায় এবং চট্টগ্রামের ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে ট্যাংক, কামান, মেশিনগান, গ্রেণেড ও অত্যাধুনিক বন্দুকসহ সাঁজোয়া যান নিয়ে বাঙালী পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা সদস্য ও ছাত্র-জনতার ওপর পাক সেনাবাহিনী হামলা করে গণহত্যা চালায়। ঐ রাতেই শুধু ঢাকাতেই ৫০ হাজারেরও বেশী মানুষকে হত্যা করে পাকবাহিনী। চট্টগ্রামে ১০০০ নিরস্ত্র বাঙালী সেনা সদস্যদের হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে যার পাল্টা জবাবে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) পুলিশ, ইপিআর ও সেনা সদস্যসহ কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-জনতা মুক্তিযোদ্ধা সেঁজে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ প্রতিরোধের মাধ্যমেই পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধ হয়। এতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বিকেল ৪.৩১ মি. পাকবাহিনী মিত্রবাহিনীর নিকট রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করলে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয় ঘটে। এ যুদ্ধে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস্ বাহিনীর সহায়তায় পাকবাহিনী ৩০ লক্ষেরও অধিক মানুষকে হত্যা করে; ৩ লক্ষেরও অধিক মা-বোনকে ধর্ষণ করে; ১ কোটিরও অধিক লোককে দেশছাড়া করে, যারা ভারতে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়; অভ্যন্তরীণভাবে গৃহহীন হয়ে পড়ে ৫০ লক্ষেরও অধিক মানুষ; বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠানসহ বহু বাড়ী-ঘরের সম্পদ লুটপাট করে, আগুন লাগিয়ে দেয়; অগনিত মানুষকে আহত করে; ৫০ হাজারের অধিক যুদ্ধ সন্তান জন্ম নেয়, যাদেরকে ১৯৭২ সালে ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রসমূহে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এভাবে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী ও তাঁদের এ দেশীয় দোসররা।শুধু তাই নয়, এ যুদ্ধে ৬ হাজারের অধিক পাকসেনা, ৭ হাজারের অধিক মুক্তিসেনা ও ৮ হাজারের অধিক ভারতীয় সেনা নিহত হয়। সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর গণহত্যাকে প্রতিরোধ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন।সেদিনের পূর্ব-পাকিস্তানের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দ তথা আজকের বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য দায়ী নয়, দায়ী তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃবৃন্দ।১৯৭০-৭১ সালের উদ্ভুত রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে তৎকালীন পাক সামরিক নেতা প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপল্স পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টো রাজনৈতিকভাবে মীমাংসা না করে মিলিটারী অপারেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। তাঁদের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণেই আজকের এ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।জুনায়েদ আহমদ সাহেব, আপনাদের রাজনৈতিক গোয়ার্তুমির জন্যই আজ পাকিস্তানের জনসাধারণের ভুগান্তি চরমে। পাকিস্তান আজ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আফগানিস্তানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাকিস্তানের মুসলিম ভাইদের আর কত রক্ত ঝড়বে। এখনও সময় আছে, ১৯৭১ সালে পূর্ব-পাকিস্তানে তথা আজকের বাংলাদেশে যে গণহত্যা পাকবাহিনী চালিয়েছিল তজ্জন্যে পাকিস্তানের ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র দিদার লাভ করুন। জুনায়েদ আহমদ সাহেব আপনি আপনার “ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ: মিথস এক্সপ্লোডেড” নামক বইয়ে গণহত্যার যে সকল তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন, তাতো পাকবাহিনী এবং রাজাকার, আলবদর ও আলশামস্ বাহিনী করেছেন, শুধু বোল পাল্টিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দায়ী করেছেন। এজন্য বাংলাদেশের জনসাধারণ আপনার ফাঁসি চায়।এখানে উল্লেখ্য যে, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যাকে অস্বীকারের পাশাপাশি গণহত্যার জন্য উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর দোষ চাপানোর মত বিকৃত তথ্যচিত্র সম্বলিত উপরোল্লিখিত বইটি ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং জাতীয় সংসদে মাননীয় মন্ত্রী (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) তোফায়েল আহমেদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দিলে প্রধানমন্ত্রী বইটির গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু পড়ে তিনি এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানান। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাও এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা করতঃ প্রতিবাদ জানায়।
বাংলাদেশের জনগণ “ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ: মিথস এক্সপ্লোডেড” এর লেখক জুনায়েদ আহমদ এর ফাঁসি চায়।
Share!