ইরাকের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দেশটির জনগণের মধ্যে যেন কোনো ভালোবাসা ও আবেগ তৈরি না হয় সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের জন্য। কিন্তু সাদ্দাম নিজের দেহের ২৭ লিটার রক্ত দিয়ে সমগ্র পবিত্র কোরআন শরীফ লিখে এক অনন্য কীর্তির জন্ম দিয়ে গেছেন, যা ধ্বংস করা নিয়ে মহাবিপদে পড়েছে সরকার।সাদ্দাম হোসেন তার শাসনামলে ১৯৯০ দশকের শেষের দুই বছর কোরআন লেখার জন্য নিয়মিত রক্ত দান করেন। তার শরীর থেকে একজন নার্স নিয়মিত রক্ত নিতেন। আর একজন ক্যালিগ্রাফি শিল্পী সেই রক্ত দিয়ে পবিত্র কোরআনের আয়াত লিখতেন।২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতে পতন হয় সাদ্দামের। পরে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়।এরপর প্রায় পাঁচ বছর পর্যন্ত সাদ্দামের রক্তে লেখা কোরআনের কথা গোপন ছিল। কিন্তু, প্রায় আট বছর আগে তিনটি পাল্লা দিয়ে সুরক্ষিত কোরআনটির কথা জানাজানি হয়ে যায়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ইরাকের আগ্রাসন পরবর্তী কর্তৃপক্ষ দ্বিধাগ্রস্ত রয়েছে যে, তারা কি কোরআনটি ধ্বংস করে ফেলবে না সংরক্ষণ করবে।বর্তমানে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সবচেয়ে বড় মসজিদটির সংগ্রহশালায় সাদ্দামের রক্তে লেখা কোরআনটি রাখা হয়েছে। গত তিন বছর ধরে এই কোরআনটি জনসাধারণের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে তালাবদ্ধ রয়েছে।নিষিদ্ধ সংগ্রহশালাটিতে প্রবেশ করতে হলে একটি প্যাঁচানো পথ অনুসরণ করতে হয়। এর পাশেই একটি সরকারি অফিস ছিল, যার মাধ্যমে এখানে প্রবেশ আটকানো হয়।ইরাকের আগ্রাসন পরবর্তী শিয়া শাসকরা খুবই সতর্ক, যাতে এমন কোনো প্রতীক ফের জনপ্রিয় হয়ে না ওঠে যা বাথ পার্টিপন্থী জনগণকে সাহসী না করে তোলে।এ কারণে সরকারি শাস্তির ভয়ে ইরাকেরা সুন্নিরা সাদ্দামের রক্তে লেখা কোরআনের ভল্টটির দরজা খুলতে ভয় পেয়ে আসছে। এছাড়া তারা মনে করে, যদি পবিত্র কোরআনের এ কপিটির সঙ্গে যথাযথ সম্মানজনক আচরণ না করে, তারা ভয়ংকর গজবের শিকার হতে পারে।সাদ্দামের পর থেকে ইরাক শাসন করছে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিতরা। এ পর্যন্ত চারটি সরকার ক্ষমতার মসনদে বসেছে। তারা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে মার্কিনদের স্বার্থ উদ্ধারে।ইরাকের সুন্নি অনুদান তহবিলের প্রধান শেখ আহমেদ আল সামারাই বাগদাদের সাদ্দাম নির্মিত ওই মসজিদটির মিনারের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, এখান যা আছে তা অমূল্য, নিশ্চিতভাবেই এটি লাখ লাখ ডলার মূল্যবান এক সম্পদ।তবে শেখ সামারাই মনে করেন, সাদ্দাম রক্ত দিয়ে কোরআন লিখিয়ে ভুল করেছিলেন। কারণ এমনটি করা হারাম।এমন মনোভাব সত্ত্বেও ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনকালীন হাঙ্গামার মাঝে পর থেকে রক্তে লেখা কোরআনের পাতাগুলো রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করে আসছেন সামারাই। তিনি প্রথমে পাতাগুলো নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখেন। পরে নিরাপত্তার কারণে তার আত্মীয়-স্বজনদের বাসায়ও এগুলো লুকিয়ে রাখেন।তিনি বলেন, আমি জানতাম যে, এগুলো সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হবে, তারপরেও আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু, বর্তমানে এগুলোকে হেফাজত করা সহজ হচ্ছে না।তিনি আরও বলেন, ভল্টটিতে ঢোকার তিনটি চাবি রয়েছে। তবে কোনোটিই এক জায়গায় নেই। আমার কাছে একটি, এখানকার পুলিশ প্রধানের কাছে একটি এবং আরেকটি বাগদাদের পূর্বাঞ্চলে রাখা আছে।ভল্টটিতে কাউকে ঢোকার অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একটি কমিটি আছে বলেও জানান শেখ সামারাই।
সাদ্দাম নিজের দেহের ২৭ লিটার রক্ত দিয়ে সমগ্র পবিত্র কোরআন শরীফ লিখিয়ে ছিলেন
Share!