বাংলাদেশ দলের দীর্ঘ অপেক্ষার নিউজিল্যান্ড সফরের পরিণতি সুখকর হয়নি। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নিউজিল্যান্ড সফরে কোনো জয় পায়নি টাইগাররা। তাদের এমন ব্যর্থতায় এখন সমালোচনার শেষ নেই। অভিজ্ঞ-নবীন খেলোয়াড়রা এই সফরে যা পেয়েছেন তার কোনো প্রশংসা এখন লোকমুখে নেই। সকল ব্যর্থতার ময়নাতদন্ত শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই দলে বড় পরিবর্তন আনার কথা বলছেন। তবে এমনটা একেবারেই চান না দলীয় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।সফর শেষে শূন্য হাতে দেশে ফিরছে টাইগাররা। ক্রাইস্টচার্চ থেকে অকল্যান্ড হয়ে বুধবার রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ঢাকা পেঁৗছবেন তামিম-সাকিবরা। অথচ ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট নির্ধারিত পাঁচদিনে শেষ হলে মঙ্গলবারও খেলা থাকত হ্যাগলি ওভালে। কিন্তু সোমবারই খেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় দলটিকে নিয়ে আরও বেশি করে কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে ওইসব সমালোচনায় কান না দিয়ে মঙ্গলবারও ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন শিষ্যদের নিয়ে। সকালে টিম মিটিংয়ে যাবতীয় ভুল-ব্যর্থতার কাঁটাছেঁড়া আর অধিনায়কের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।দেশে ফিরেই মাত্র দিন কয়েকের ছুটি। এরপর ভারত সফরের প্রস্তুতি নিতে হবে। সামনে শ্রীলংকা সফর রয়েছে, এরপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি নিতে যেতে হবে আয়ারল্যান্ড। বছরের শেষভাগে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কঠিন দুটি পূর্ণাঙ্গ সফরও অপেক্ষা করছে। তাই দলে কিছু পরিবর্তন আসবেই। হাথুরুসিংহেকে সব ভেবেই পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে। কোচের সেই পরিকল্পনায় দলে বড় কোনো পরিবর্তন নেই, ‘আমি তাদের পারফরম্যান্সে খুশি। সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। সফর থেকে ইতিবাচক অনেক কিছুই পাওয়া গেছে। এই ঘটনার জন্য তাদের কয়েকজনকে বাদ দেয়া কিংবা বড় ওলট-পালট করা ঠিক হবে না।’ মাসব্যাপী সফরে কোনো জয় না পাওয়ায় খুবই হতাশ হাথুরুসিংহে। যদিও বিরূপ পরিবেশে খেলেও বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডের ভেন্যুতে ভেন্যুতে লড়াই করার সামর্থ্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশ জয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল প্রতিটি ম্যাচে। সেই সম্ভাবনা থেকেই ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে নিচ্ছেন হাথুরু। কোচ মনে করছেন, দলের তরুণ বোলাররা নিউজিল্যান্ড সফর থেকে যে অভিজ্ঞতা নিয়ে যাচ্ছে তা আগামীতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বোলিং আক্রমণ উন্নয়নে বেশ কাজে দেবে।
বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি। সেটি কোচ হিসাবে হাথুরুর জন্য খুবই হতাশার। পুরো নিউজিল্যান্ড সফরকে শুধু সুযোগ সৃষ্টি আর সুযোগ হারানোর সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘সৎভাবে বলতে গেলে এটি খুবই হতাশার। কারণ দল যদি খারাপ খেলত তাহলে এক কথা ছিল।’ তাহলে এর কারণ কি খেলোয়াড়দের মানসিক বাধা? হাথুরু বলেন, ‘মানসিক সমস্যা একটি সমস্যা। এটি আমরা চিহ্নিত করেছি। আরও কিছু সমস্যা আছে।’ক্রাইস্টচার্চের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘ব্যাটসম্যানদের প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুরো সফরজুড়ে বড় একটি সমস্যা ছিল। দলের খেলোয়াড় সবাই হয়তো এখন মানসিক-শারীরিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী না। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের বোলাররা খুবই ভালো বল করেছেন। কিন্তু এটি কোনো অজুহাত নয়।’হাথুরু সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘এই দলটিই দেশে খুব ভালো একটি দল। এরা দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলছে। কাজেই খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা মানসিক-শারীরিক বা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। কিন্তু আমি খুশি এ কারণে যে পুরো সিরিজে আমরা আমাদের শক্তিমত্তা দেখাতে পেরেছি। এর জন্যই এ দলটির ওপর মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। খেলোয়াড়দেরও তাদের প্রতি প্রত্যাশার ফল দেখানো উচিত।’
বোলারদের নিয়ে কোচ আরও বলেন, ‘তরুণ বোলারদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা আগামীতে বোলিং আক্রমণ শক্তিশালী করার কাজে লাগবে। কারণ তারা এখানে দ্রুত শেখার পাশাপাশি নিজেদের ভুলগুলো সংশোধনও করেছে। এই অভিজ্ঞতা বোলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।’
কামরুল ইসলাম রাবি্ব এবং মেহেদী হাসান মিরাজের কথা কোচ বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন। দুই তারুণকে নিয়ে কোচ বলেছেন, ‘এই দু’জন এর আগে প্রথম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে খেলেছে। এখানে এসে তারা খেলেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে। এখান থেকে তারা নানাকিছু খুব তাড়াতাড়ি শিখেছে। এটা তাদের শারীরিক ভাবেও চ্যালেঞ্জিং ছিল। বাংলাদেশের এই খেলোয়াড়রা হয়তো এভাবে বিদেশে খেলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু ঘরোয়া লিগে তারা বিরতিহীন খেলেছে। খেলোয়াড়দের অনেকের হয়তো এখন শারীরিক-মানসিক বিশ্রাম দরকার।’
সামনে ভারতের সঙ্গে খেলা আছে। এরপর শ্রীলঙ্কা সফরসহ আরও অনেক খেলা। খেলোয়াড়দের বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ প্রসঙ্গে কোচ বলেন, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে খেলোয়াড় যারা বিশ্রাম চায় তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হবে। শারীরিক সামর্থ্য বাড়াতে যারা আরও অনুশীলন চায় সে ব্যবস্থাও করা হবে।’ তামিম-সাকিবের মতো শীর্ষ ক্রিকেটাররা দেশের বাইরের লিগেও খেলেন। এক্ষেত্রে তাদের ব্যাপারে করণীয় জানতে চাইলে কোচ বলেন, ‘তারা পেশাদার খেলোয়াড়। তাদের বিষয়গুলো দেখার যোগ্যতা-সামর্থ্য তারা নিজেরাই রাখেন।’
মুস্তাফিজ প্রসঙ্গে কোচ বলেন, ‘সে মেডিক্যালি ক্লিয়ার। কিন্তু সে নিজের ফিটনেস নিয়ে যে অনাস্থায় ভুগছে তা থেকে উত্তরণের কাজ তারা করে যাচ্ছেন।’
নিউজিল্যান্ড সফরের সকল ব্যর্থতার ময়নাতদন্ত শুরু
Share!