মাঝারি মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার
কি উন্নতি ঘটবে?
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মূলত এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি সামনে আসে, যার জন্য মধ্যবিত্ত আমেরিকানরা সোচ্চার। অর্থনৈতিক সূচক ভালো হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ আমেরিকান পরিবার মনে করে না যে, তাদের ভবিষ্যত্ সুরক্ষিত। ধনী ও দরিদ্রের মাঝে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বিভাজন নিয়ে তারা শঙ্কিত। কারণ, এই বিভাজনের ফলে তাদের এবং তাদের সন্তানদের অর্থনৈতিক অবস্থান তলানিতে গিয়ে ঠেকতে পারে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় তাদের বর্তমান আয় এবং কর্মসংস্থানের অবস্থা ভালো হলেও সুযোগ-সুবিধা এবং স্থায়িত্বের দিক থেকে তা আগের চেয়ে খারাপ বলেই মনে হয়। ক্রমবর্ধমান শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের সঙ্গে তাদের সন্তানরা কীভাবে খাপ খাওয়াবে—এটাও তাদের চিন্তার অন্যতম কারণ ছিল।ডেমোক্র্যাট বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থকদের মধ্যেও এসব দুশ্চিন্তা ছিল। আর এই অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা থেকেই লক্ষ লক্ষ ভোটার হিলারির চাইতে ট্রাম্পকে বেশি পছন্দ করেছিল। তারা মনে করে যে, তাদের সম্প্রদায়ের পুনর্গঠনে এখনই একটি মৌলিক পরিবর্তন আবশ্যক। দলগত দিক থেকে তারা ভিন্ন হলেও মৌলিক সমস্যাগুলোর ব্যাপারে কিন্তু তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অভিন্নই ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এই মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করবে, এমন ভাবনা থেকেই অনেক ডেমোক্র্যাট তাকে সমর্থন করেছিল।
কীভাবে সন্ত্রাসবিরোধী নীতির ভিত
মজবুত হতে পারে
সন্ত্রাসবিরোধী নীতিকে ঢেলে সাজানোর প্রকৃত সময় এখনই। ইতোমধ্যেই আইএস নামে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা জঙ্গি সংগঠনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের জন্য ভয়ানক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সহজ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে আমেরিকার হলিডে মার্কেট এবং নাইট ক্লাবগুলোতে আক্রমণ করছে। এই স্থানগুলোতে সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ততটা জোরদার না থাকায় সাধারণত তারা এই হামলাগুলো করতে পারছে। উপরন্তু তাদের সঙ্গে আংশিক বা সর্বতোভাবে ঐক্য পোষণ করার মতো মানসিকভাবে বিপথগামী কিছু মানুষও আছে।ট্রাম্পের মতে, আমরা একটি জাতি বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে এই হুমকির মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছি। উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে আরো অধিক কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োগ করে আমেরিকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস আবশ্যক। পাশাপাশি সহজ লক্ষ্যবস্তু এবং প্রধান পর্যটন স্থানগুলোতেও আমেরিকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে।
আমেরিকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো
কি নিরাপদ?
ট্রাম্পের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে কিনা—এই ব্যাপারেও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট-প্রার্থী ইভান ম্যাক মুলিনও তার ব্যাপারে কিছু সতর্ক বার্তা প্রদান করেন। তার মতে, নতুন প্রেসিডেন্টের স্বৈরাচারী ও সর্বগ্রাসী প্রবণতা সংবাদমাধ্যম, নাগরিক স্বাধীনতা এবং অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
আমেরিকান সাংবাদিকতার কী হবে?
মার্কিন সাংবাদিকতাকে বৈধভাবে রাষ্ট্রীয় সংকট হিসেবে দেখানো হতে পারে। কাঠামো, পেশা এবং প্রযুক্তিগত মৌলিক বিষয়গুলোই এখানকার মূল সমস্যায় পরিণত হতে পারে। সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলে ব্যবসায়িক বিষয়গুলোর প্রাধান্য এতটাই বেড়ে যেতে পারে যে, সংবাদ গুরুত্বহীন হয়ে যেতে পারে, অন্যদিকে কম গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলোও সেখানে সংবাদ হিসেবে স্থান পেতে পারে। তাছাড়া ট্রাম্পও সরাসরি গণমাধ্যমকে আক্রমণে দ্বিধাবোধ নাও করতে পারেন।
বোতল থেকে বেরিয়ে যাওয়া জিনের কি হবে?
সম্প্রতি অনেক রিপাবলিকানকেই ট্রাম্পের প্রচারণায় সক্রিয় হিসেবে দেখা যায়। যদিও ইতিপূর্বে তারা এমন সক্রিয় ছিলেন না। ট্রাম্পের বিতর্কিত এবং স্ববিরোধী বক্তব্য নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে প্রতিক্রিয়ার অনেক উপাদান জুগিয়েছে। তিনি অবৈধ অভিবাসীদের ধর্ষক এবং খুনি হিসেবে আখ্যা দেন। অধিকন্তু ইসলামের ব্যাপারেও তাঁর বিরূপ মনোভাব স্পষ্টতই দৃশ্যমান।
ডেমোক্র্যাটরা কি করবেন?
পরাজিত দল হিসেবে অবশ্যই ডেমোক্র্যাটদের নিকট বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আসলেই ডেমোক্র্যাটরা এই নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছে। তারপরও যদি তারা সরকারের সঙ্গে একাত্ম হয়, তবে নিঃসন্দেহে রিপাবলিকানরা অনেক পরিবর্তন আনতে পারবে। কিন্তু এই মুহূর্তে ডেমোক্র্যাটদের কি করা উচিত—তা নিজেদের কাছেও পরিষ্কার না। তবে তাদের কেউ কেউ মনে করছেন যে, সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে প্রশাসনকে সহায়তা করা উচিত। অপরপক্ষে অন্যরা মৌলিক হুমকি এবং সামাজিক নিরাপত্তাজনিত সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়েও ট্রাম্প, তাঁর মন্ত্রিসভা এবং রিপাবলিকান কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী নন। তাদের যুক্তি হলো যে, তারা দেখেছেন কীভাবে রিপাবলিকানরা রাজনৈতিকভাবে প্রেসিডেন্ট ওবামার কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তারা এখন একই কাজের পুনরাবৃত্তি করতেই পারেন।
আমেরিকা কি যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে?
নির্বাচনের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সামরিক সংঘাত বৃদ্ধি পেতে পারে। আইএস-এর হুমকি মোকাবিলায় নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কঠোর বিবৃতি দিয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি তাইওয়ানের একজন নেতার ফোন পান, যার ফলশ্রুতিতে তিনি টুইট করে সর্বশেষ কমিউনিস্ট পরাশক্তিদের জানিয়ে দেন যে, তাঁর ক্ষেত্রেও ১৯৭০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুসৃত ‘এক চীনা নীতি’র ব্যত্যয় ঘটবে না। তাছাড়া রাশিয়ান সরকারের প্রতি তাঁর সমর্থনও বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে। তাঁর ঘনিষ্ঠজন বিশেষত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ফ্লিন ও সম্ভাব্য উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বোল্টন সম্ভবত সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁর মন্ত্রিসভায় জেনারেলদের আধিক্যের কারণেও কূটনীতির চাইতে সামরিক শক্তির বিষয়টি প্রাধান্য পেতে পারে।
বর্তমানে আমরা একটি উত্তপ্ত সময় পার করছি। মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সিরিয়ার গৃহযুদ্ধও সম্ভবত খুব শীঘ্রই বন্ধ হবে না। আর এই যুদ্ধে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।ইরানের পারমাণবিক চুক্তিকেও অনেকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখছেন। চুক্তি উত্থাপনের সময়ে বিষয়টি নিয়ে প্রচুর মতানৈক্য থাকলেও বর্তমানে তা কার্যকর হয়ে গেছে। মনোনীত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল জেমস ম্যাটিস মনে করেন যে, এই চুক্তি ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব না। স্বয়ং ট্রাম্পও যদি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে চুক্তিটি অকার্যকর করতে যায়—তাহলেও ইরানের সঙ্গে ভয়াবহ যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। ২০১৭ সালে আমেরিকা একটি সুস্পষ্ট বিভাজনের দিকে অগ্রসর হতে যাচ্ছে, যার একদিকে আছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শাসন পরিচালনা কেমন হবে—সেই বিষয়ক ভীতি এবং অন্যদিকে আছে ইতিবাচক পরিবর্তনের ব্যাপক প্রত্যাশা। কোনটি ঘটতে যাচ্ছে অচিরেই আমরা তা জানতে পারব।