মিথুন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ছাড়া মানবজীবন অচল। আর ব্যাচেলর জীবন অচল বুয়া ছাড়া। জীবন চলার পথে মেনে নিতে হয় অনেক কিছুই। যেমন মেনে নিতে হয় বুয়াদের যেকোনো আচরণ। কারণ, ওই যে ব্যাচেলর জীবন অচল বুয়া ছাড়া! খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে সেই বুয়াদের প্রকারভেদ করেছেন বিশিষ্ট মেসবাসী ব্যাচেলর ফিরোজ
উচ্চাভিলাষী বুয়া
এই বুয়ারা অর্থমন্ত্রী হলে এত দিনে দেশের অর্থনীতির বারোটা বেজে যেত। বছর বছর উচ্চাভিলাষী বাজেট পাস করে আমজনতার হার্টফেল করিয়ে ছাড়তেন। মেসে এই বুয়াদের এক কেজি চালের ভাত রান্না করতে বললে দেড় কেজি রান্না করে বসে থাকেন। ফলে ৩০ দিনের চাল শেষ হয় ২০ দিনেই।
ছিঁচকাঁদুনে বুয়া
তাঁরা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। কোনো কাজে গন্ডগোল বাধালে এক ধমকে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। কেঁদে মানুষ জড়ো করে ফেলতেও ওস্তাদ তাঁরা! বাংলা সিনেমায় আবেগপ্রবণ মা কিংবা বোনের চরিত্রে খুব ভালো করার সম্ভাবনা আছে তাঁদের।
চিররোগী বুয়া
প্রতি সপ্তাহে তাঁদের অসুখ হবেই হবে। কোনো দিন জ্বর, কোনো দিন মাথাব্যথা, কোনো দিন বাতের ব্যথা। নিতান্তই কোনো দিন অসুস্থ না হলে তাঁদের শাশুড়ির মেয়ের ছেলের বোনের বাবার ভাইয়ের কিছু না কিছু একটা হবেই।
বাজারের ব্যাগধারী বুয়া
এই বুয়ারা বাসায় আসার সময় একটা খালি ব্যাগ নিয়ে আসেন। রান্না করে যাওয়ার সময় ব্যাগটার ওজন আশ্চর্যজনকভাবে কিঞ্চিৎ বেড়ে যায়!
ফাঁপরবাজ বুয়া
তাঁদের রান্নার ব্যাপারে একটা কিছু বলেছেন তো মরেছেন। ‘তয় আপনে কি বোজাইতে চান আমি রান্না পারি না? জানেন আমি কোন দ্যাশের মাইয়া? তিন গেরাম চইষ্যা খায়া আইছি; আর আপনে কন, আমি রান্না পারি না!’ এই টাইপের কথায় আপনার খাওয়ার ইচ্ছা চলে যাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত।
রোমান্টিক বুয়া
তাঁদের মোবাইল ফোনের রিংটোনগুলো হয় এমন—‘সাথি তেরা পেয়ার হো যায়ে…’, ‘হাম তেরে বিন আব নাহি…’।
গানপাগল বুয়া
তাঁরা রান্না করার সময় মোবাইল ফোনে গান শুনতে ভালোবাসেন। ‘মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা, চাঁদ কিন্তু একটারে’—এসব গান তাঁদের ফেবারিট লিস্টে থাকে। আবার মাঝেমধ্যে গুনগুনিয়ে গানও গেয়ে ওঠেন, ‘বন্ধু যখন বউ লইয়া…’।
শুচিবাইগ্রস্ত বুয়া
তাঁদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সেন্স এতই ভালো হয় যে আপনার বাসার সাবান দুই দিনেই শেষ হয়ে যাবে। তাঁরা অপরিষ্কার কোনো কিছু মোটেও পছন্দ করেন না। সাবানের কোম্পানিগুলো তাঁদের জন্য স্পেশাল এডিশন বের করে ফেলতে পারে অচিরেই।
অভিমানী বুয়া
তাঁরা একটু আবেগপ্রবণ হন। তরকারিতে নুন কিংবা ঝালের কমবেশি হয়েছে কেন? এই প্রশ্নটা যদি একটু ঝাঁজ মিশিয়ে বলেন তাহলে উত্তর আসবে, ‘আমারে আমার ট্যাকা দিয়া দ্যান, আমি আর আপনাগো কাম করুম না।’
কেশবতী বুয়া
তাঁদের মাথায় চুল এতই বেশি যে তাঁরা নিঃসন্দেহে শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন করতে পারবেন। তাঁদের নাইনটি নাইন পার্সেন্টই ওকে। শুধু হঠাৎ হঠাৎ তাঁদের মাথার দু-একটা চুল খুঁজে পাওয়া যায় ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতে, সুস্বাদু তরকারির বাটিতে!