ওয়াজাহাতউল্লাহ ওয়াস্তিকে মনে রেখেছেন, এমন ক্রিকেটপ্রেমী বিরল। পাকিস্তানের এই সাবেক ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল ৬টি টেস্ট ও ১৫টি ওয়ানডে খেলেই। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তিনি। সেমিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটা ভালো ইনিংসও খেলেছিলেন তিনি। হঠাৎ ওয়াস্তি প্রসঙ্গ আসার কারণ কী? প্রায় বিস্মৃত এই পাকিস্তানি ক্রিকেটারের প্রসঙ্গটা আসছে কারণ, তাঁর সেরা ‘বোলিং’ বাংলাদেশের বিপক্ষে!আজ থেকে ১৭ বছর আগে, বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিষেকের ঠিক আগ দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে বাংলাদেশকে রীতিমতো ‘নাস্তানাবুদ’ করে ছেড়েছিলেন এই ওয়াস্তি। আজ নেলসনে কেন উইলিয়ামসন যেভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ‘হন্তারকে’র ভূমিকা নিলেন; তাঁর নিরীহ-দর্শন বলগুলো যেভাবে সাকিব-মোসাদ্দেকদের কাছে ভয়ংকর হয়ে উঠল, তাতে হঠাৎ করেই ১৭ বছর আগে ওয়াস্তির সেই ‘কীর্তি’ মনে করিয়ে দিল। একটাই সান্ত্বনা যে ওয়াস্তির চেয়ে উইলিয়ামসন বেশ নিয়মিতই দলের পক্ষে হাত ঘোরান। ওয়াস্তি তাঁর গোটা ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র তিনবার বল করার সুযোগ পেয়েছিলেন।নেলসন আজ হঠাৎ করেই মনে করিয়ে দিল পুরোনো বাংলাদেশকে। যে দলটি গত দেড়-দুই বছরে জয়টাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে, সে দলটিই আজ কীভাবে যেন পাল্টে গেল। ২৫২ রানের লক্ষ্যে ২২.৫ ওভারে ১০৫/১ থেকে ১৮৪ রানে ‘শেষ’ হয়ে যাওয়া তো পেছনের দিনগুলিতে হাঁটাই।গত দুই বছরে বাংলাদেশ যে ব্যর্থ হয়নি, তা নয়। এই দুই বছরে বাংলাদেশ যে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করে আসেনি—এমনটি বলাও সত্যের অপলাপ। এই তো গত অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে তো নিশ্চিত জয় হাতছাড়া করেছিল বাংলাদেশ। মাত্র ১৭ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছিল তারা।
মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচটি নিশ্চয়ই ভোলার নয়। নিশ্চিত জয়ের ম্যাচে শেষ তিন বলে ৩ উইকেট হারিয়ে হেরে যাওয়ার দুঃসহ স্মৃতিও খুব টাটকা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানে অলআউট হয়ে যাওয়াটাও এ বছরেরই ঘটনা। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের ব্যাটিং, চোখের জন্যও যন্ত্রণাদায়ক!ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকার ওই ম্যাচ কিংবা বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচ—প্রতিপক্ষের ওপর অন্তত চড়ে বসা গিয়েছিল। কিন্তু নেলসনে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ, ‘নতুন বাংলাদেশ’ কথাটাকে উপহাস করছে।নেলসনে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেই পুরোনো রোগটাই নতুন করে ফিরে এল। ব্যাটসম্যানদের উইকেটের মূল্য বুঝতে না পারা। দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে আউট হওয়া। পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী খেলতে না পারা। তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন—সবাই আজ এমন সব কাণ্ড করলেন, যেগুলোকে দায়িত্বশীল ক্রিকেট বলা যায় না কোনোভাবেই।অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ অথবা মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সে ম্যাচটির ব্যর্থতাকে হয়তো ‘দুর্ঘটনা’ বলে ঢেকেঢুকে রাখা গেছে, কিন্তু আজকের ম্যাচটিকে কী বলবেন মাশরাফিরা?২০০২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে পাকিস্তানকে ২০২ রানে গুটিয়ে দিয়েও ৪৯ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। নিজ দেশ, নিজ দর্শকের সামনে মাত্র ২০২ রান তাড়া করতে পারেনি। ২০০৩ সালে কানাডার বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেই হার আজও লজ্জায় ফেলে ক্রিকেটপ্রেমীদের। তারও আগে ১৯৯৮ সালে চেন্নাইয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়ার ২২৬ রানের জবাবে ১৯৮ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি সেই দিনগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে নতুন করে।নিশ্চয়ই এর থেকে বেরিয়ে এসে আজকের ম্যাচটিকে ‘অঘটন’ প্রমাণ করবেন মাশরাফিরা। অবশ্য একটা ‘ভালো’ দিকও পাওয়া যাচ্ছে, সাফল্য পেতে পেতে অভ্যস্ত চোখগুলো মাশরাফিরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন—যতটা অনায়াসে এত এত সাফল্য এসেছে নিকট অতীতে, ব্যাপারটা অত সহজও কিন্তু নয়
মনে করিয়ে দিল পুরোনো বাংলাদেশকে
Share!