বিজয় সরণী টাওয়ার (নীচতলা), ১২১/৩ তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা- ১২১৫ তে ডিসেম্ব^র ০২, ২০১৬, রোজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬.০০ ঘটিকায় বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেসে (বিজেসি)-র সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)-র সভাপতি বঙ্গরতœ মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু এক নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। বিজেসি-র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ মারফত আলী মাষ্টার, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য শেখ মোঃ জামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আজাহার আলী এবং চাপাইনবাবগঞ্জের সভাপতি জুয়েল ইমাম।তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভোটার হবেন- পৌরসভা ও উপজেলার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও কমিশনার/মেম্বারগণ। জেলা পরিষদের নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে হবে, এটাই জনগণের প্রত্যাশা ছিল। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাঙলা এ.কে. ফজলুল হক সারা জীবন রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করণের দাবীসহ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানের শাসকবৃন্দ ও পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম/ আন্দোলন করেছিলেন। ঐ সময়ে পাকিস্তানে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কমিশনার/মেম্বারগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন। প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান পরোক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চেয়ারম্যান, কমিশনার/মেম্বারদের ভোটে ১০ বছর পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ ধরণের গণতন্ত্রকে পরোক্ষ গণতন্ত্র (ইধংরপ উবসড়পৎধপু) বলা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সিলেকশনের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন। গণতন্ত্রকে সর্বস্তরের শাসনব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতায় এলেও তা মন্দের ভাল। সরকার হয়ত নির্বাচনী ব্যয়ভার কমানোর জন্যই জেলা পরিষদ নির্বাচনে ইধংরপ উবসড়পৎধপু পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানাই। জেলা পরিষদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় যেন আমাদের পূর্বসূরি ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খানের মত বর্তমান সংসদের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা চালু করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কমিশনার/মেম্বারদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পদ্ধতি পুনঃ প্রবর্তন না করা হয়- এটাই জনগণের প্রত্যাশা।তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল বাংলার মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠাকরণ ও অর্থনেতিক মুক্তি আনয়ন। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হতে চলেছে, সাধারণ মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার আংশিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও গরীব, মেহনতি, দুঃস্থ, নির্যাতিত ও নিপীড়িত শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আজও আসেনি। এ সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁরা গণমানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং শতকরা ৮৫ ভাগ সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ স্বাধীনতাত্তোর জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক সমবাদ ও সামাজিক অর্থনীতি চালু করার মনমানসিকতা ক্ষমতাসীন দলসমূহের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের লক্ষ্য করা যায়নি। আমরা লক্ষ্য করেছি জাতীয় পার্টির শাসনামলে রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্রে দুর্নীতির বীজ বপন করা হয়, বিএনপি-র শাসনামলে বাংলাদেশ ৪ বার বিশ্বের সর্বশেষ্ঠ দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে শেয়ার কেলেংকারী, হলমার্ক, ডেসটিনি ও বেসিক ব্যাংক কেলেংকারী লক্ষ্য করা যায়।তিনি আরও বলেন, আসুন দলমত নির্বিশেষে আমরা সকল ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে আগামীতে দেশের গণমানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়, অর্থনৈতিক মুক্তি ও জীবনমান উন্নয়নে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীর মাধ্যমে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সম্পন্ন করি এবং সেইসাথে বর্তমান সরকার যদি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা পার্লামেন্টে পাশ করিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেন সেক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করি এবং দেশে সুশাসন তথা শান্তি প্রতিষ্ঠা করি।তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মে জীব হত্যা মহাপাপ, অথচ আরাকান রাজ্যে সেনাবাহিনী নির্বিচারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা করে চলেছেন। ঘরবাড়ী পুঁড়িয়ে দিচ্ছেন, সম্পদ লুটপাট করছেন, যা নজিরবিহীন। মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের নির্যাতিত, নিপীড়িত মুসলিম রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মানবিক কারণে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।তিনি আরও বলেন, গণমানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়, অর্থনৈতিক মুক্তি ও জীবনমান উন্নয়নে আগামী ২ দশকে বাংলাদেশকে “ভিলেজ সিটি” সমন্বিত শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে উন্নতি করণের ঈপ্সিত লক্ষ্যে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) সর্বসময় জনগণের পাশে আছে এবং আগামীতেও থাকবে।
সাংবাদিক সম্মেলন
Share!