মুঠোফোনের সেবা নিয়ে গ্রাহকেরা ভোগান্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কোম্পানিগুলোর দাবি, ব্যবসায়িক স্বার্থেই তারা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিক থেকেও কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।অহেতুক এসএমএসের বিরক্তি, ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে নানা জটিলতা, রিচার্জ ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা, মুঠোফোনে কল-ড্রপ, বায়োমেট্রিক সিম রেজিস্ট্রেশন, দুর্বল নেটওয়ার্কসহ নানা বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে এ নিয়ে ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন গ্রাহকেরা।বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, অপারেটরদের ছাড়া এ গণশুনানি হয়েছে একতরফা। বিটিআরসির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া সংশ্লিষ্ট খাতের কেউই ছিলেন না। অপারেটরদের পাশাপাশি মোবাইল-সেবা দেওয়ার সঙ্গে আইজিডব্লিউ, এনটিটিএন, বিটিএস অপারেটর, হ্যান্ডসেট ও এক্সেসরিজ আমদানিকারক, ইন্টারনেট প্রোভাইডারসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান জড়িত। তারা সেখানে ছিল না। এতে করেই বোঝা যায় বিটিআরসি বা অপারেটররা একে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগগুলো গ্রন্থনা করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপারেটরদের কোনো প্রতিনিধি শুনানিতে উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাঁরা সরাসরি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে চাননি।’তবে মুঠোফোন অপারেটররা বিটিআরসির গণশুনানিকে স্বাগত জানিয়েছে। মুঠোফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসির এই উদ্যোগকে তাঁরা সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, গণশুনানিতে পাওয়া তথ্য ও অভিযোগ সম্পর্কে বিটিআরসির সঙ্গে বসে পর্যালোচনা শেষে ব্যবস্থা নেবে অপারেটররা।তবে গণশুনানিতে আসা বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তারা এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য দিয়েছে। খণ্ডন করার চেষ্টা করেছে অভিযোগগুলো। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকেই উদ্ধৃত হতে অপারগতা জানিয়েছেন।বিভিন্ন ধরনের অফার ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে অসংখ্য খুদে বার্তা বা এসএমএস নিয়ে বিরক্ত গ্রাহকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে একাধিক মোবাইল ফোন কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেন, এর সঙ্গে অপারেটররা জড়িত নয়। তারা কখনোই কোনো গ্রাহকের নম্বর বাইরের কাউকে দেয় না। তাহলে কীভাবে এসব এসএমএস আসে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, অনেকেই বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিজেদের নম্বর দেন। সেখান থেকে অনেক এসএমএস আসে। বিভিন্ন ডিরেক্টরিতে অনেকের নম্বর থাকে, যা থেকে অনলাইন বিপণনকারী নম্বর সংগ্রহ করে। এটা বন্ধ করার বিষয়ে অপারেটরদের পক্ষ থেকে কিছুই করার নেই বলে জানান তাঁরা। এটা বিটিআরসির এখতিয়ারে পড়ে। এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যানও বললেন, এ বিষয়ে বিটিআরসি ব্যবস্থা নেবে। কোনো গ্রাহক যদি প্রমোশনাল এসএমএস পেতে না চান, সেটির একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে।কল-ড্রপে ক্ষতিপূরণ নিয়ে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে অপারেটরদের বক্তব্য হলো, এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক যে মানদণ্ড রয়েছে, তার থেকে বাংলাদেশে কল-ড্রপের হার কম। নেটওয়ার্ক দুর্বলতা প্রসঙ্গে অপারেটরা জানায়, বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ এলাকা নেটওয়ার্কের ভেতরে। তারপরও কিছু কিছু এলাকায় অনেক সময় সমস্যা হয় কারিগরি কারণে। অনেক সময় নেটওয়ার্কের ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি সমাধান করে অপারেটররা।গণশুনানিতে একজন গ্রাহক অভিযোগ করেছিলেন, অপারেটরগুলো যেসব অফার দেয়, তার অধিকাংশই রাতের বেলায় প্রযোজ্য। এটি তাদের ব্যবসায়িক কৌশল হতে পারে। তরুণদের যখন বই পড়ার কথা ছিল, তখন তারা মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। এ প্রসঙ্গে অপারেটরদের বক্তব্য হলো, রাতের বেলায় নেটওয়ার্ক কম ব্যবহার হওয়ার কারণে দামটা কম রাখা যায়। এর ফলে অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন। যাঁরা ফ্রিল্যান্সিং করছেন, তাঁদের কাজ মূলত রাতে। তাঁরা কম খরচে কাজ করতে পারেন।গ্রামীণফোনের বহির্যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সৈয়দ তালাত কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকদের সব অভিযোগই যাচাই করে দেখা হবে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক ও গ্রাহকনির্ভর বাজারে আমরা নিজেদের স্বার্থেই গ্রাহককে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা অব্যাহত থাকবে।’ রবির মুখপাত্র ইকরাম কবীর বিটিআরসির শুনানি বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে অ্যামটবই বক্তব্য দেবে। বাংলালিংকের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, অ্যামটবের বক্তব্যই তাদের বক্তব্য।
মুঠোফোনের সেবা নিয়ে গ্রাহকেরা ভোগান্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ
Share!