তবলা তিনি অনেক বাজিয়েছেন। তবে এবার লক্ষ্য বিশ্ব রেকর্ড গড়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানো। এ জন্য তাঁকে অন্তত টানা ২৫ দিন বাজাতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই গতকাল রোববার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তবলাবিশারদ সুদর্শন দাশ পূর্ব লন্ডনের মেনর পার্ক এলাকার শিভা মুনেতা সঙ্গম মিলনায়তনে বাজানো শুরু করেছেন স্থানীয় সময় গতকাল বিকেল চারটা থেকে বাজানো শুরু করেন সুদর্শন। এর আগে এক অনুষ্ঠানে শুভানুধ্যায়ী ও স্পনসররা সুদর্শনের রেকর্ড গড়ার এই আনুষ্ঠানিক চেষ্টার শুভকামনা করে।হাতে বাদ্যযন্ত্র বাজানোর রেকর্ডটি বর্তমানে ভারতের কুজলমান্নাম রামকৃষ্ণান নামের এক ব্যক্তির দখলে রয়েছে। ২০০৯ সালে ভারতের কেরালায় ৫ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত টানা ৫০১ ঘণ্টা বাজিয়ে তিনি ওই রেকর্ড গড়েন।এখন ৫০১ ঘণ্টার বেশি বাজালেই নতুন রেকর্ড হবে। তবে তবলাবিশারদ সুদর্শন চান কমপক্ষে ৫১০ ঘণ্টা বাজাতে। যাতে ওই রেকর্ড ভাঙতে কেউ সাহস না করে।সুদর্শন দাশের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। অমূল্য রঞ্জন দাশ ও বুলবুল রানী দাশ দম্পতির সন্তান সুদর্শন চার বছর বয়স থেকেই চট্টগ্রামের আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমিতে তবলায় তালিম নেওয়া শুরু করেন। ১৯৯০ সালে ফুলকুঁড়ি আয়োজিত সংগীত প্রতিযোগিতায় তবলায় স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আন্তকলেজ প্রতিযোগিতায় তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৯২ সালে চলে যান ভারতের শান্তিনিকেতনে। সেখানে পণ্ডিত বিজন চ্যাটার্জির কাছ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৯৮ সালে ভারতের বোলপুরের শান্তিনিকেতন থেকে তাঁকে তবলাবিশারদ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো সুদর্শন ২০০৪ সালে লন্ডনে প্রথম ‘তবলা অ্যান্ড ঢোল’ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে বর্তমানে ৫০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ২০০৮ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক তবলা প্রতিযোগিতায় তিনি দ্বিতীয় পুরস্কার রৌপ্যপদক লাভ করেন। আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করা সুদর্শন বর্তমানে নিউহাম ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে ‘মিউজিক ইন্সপেক্টর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে সুদর্শন জানান, গিনেস বুকে নাম তোলার এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য তিনি তিন বছর ধরে চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ তাঁকে টানা ১৫ দিন বাজানোর একটা অনুশীলনও করে দেখাতে হয়েছে। এরপর ১ আগস্ট গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ এক ই-মেইল বার্তায় সুদর্শনকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অনুমোদন দেয়। তারাই প্রতিযোগিতার নিয়ম ও শর্তগুলো বাতলে দেয়।গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজ সারতে প্রতি ঘণ্টায় সুদর্শন মাত্র পাঁচ মিনিট বিরতি পাবেন। সে হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় তাঁর বিরতি মিলবে দুই ঘণ্টা। চাইলে বিরতির সময়গুলো জমিয়ে একসঙ্গে লম্বা বিরতি নেওয়া যাবে। তবলা বাজানোর সময়ও সুদর্শন ইচ্ছা করলে খেতে পারবেন। তবে তবলায় হাত চালানো বন্ধ করা যাবে না। অন্য কেউ তাঁকে খাইয়ে দিতে পারবেন।সিসি টিভির মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করবে গিনেব বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কর্তারা। এ ছাড়া পুরো প্রক্রিয়া দুটি ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করা হবে।সুদর্শন বলেন, রেকর্ড গড়তে পারলে তাঁর কোনো আর্থিক লাভ হবে না। উল্টো ২৫ দিনের জন্য মিলনায়তন ভাড়া, নিরাপত্তারক্ষী ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে সুদর্শনের এই উদ্যোগে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, রেকর্ড গড়তে পারলে একজন বাংলাদেশি হিসেবেই নামটি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে উঠবে। সেটাই পরম পাওয়া।আয়োজনটি সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত যে-কেউ মিলনায়তনে গিয়ে এই ঐতিহাসিক তবলা ম্যারাথনের সাক্ষী হতে পারবেন
বিশ্ব রেকর্ড গড়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম সুদর্শন দাশ
Share!