Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

ছেলেবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল নায়ক হওয়ার কিন্তু হলাম বাস্তবেন ‘ভিলেন

ছেলেবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল নায়ক হওয়ার। স্বপ্ন পূরণ করতে এফডিসির ফটকে দাঁড়িয়েও থেকেছেন দিনের পর দিন। কিন্তু ফটকে পেরিয়ে ভেতরে যাওয়া হলো না তার। রূপালি পর্দায় নায়ক হতে না পেরে হয়ে যান বাস্তবেন ‘ভিলেন’। সিডির দোকানে কাজ করতে করতে একসময় শুরু করলেন সিনেমা পাইরেসির কাজ। একের পর এক সিনেমা পাইরেসি করে হয়ে যান  ‘পাইরেসি সম্রাট’। ১২ অক্টোবর অস্ত্রসহ র‌্যাব-২ এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে নিজের সম্পর্কে এসব তথ্য জানিয়েছেন পাইরেসি সম্রাট সেলিম খান।  সিনেমা তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ে যারা কাজ করেন তাদের মাধ্যমেই সিনেমা মুক্তির আগেই পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।অশ্লীলতা ও অডিও-ভিডিও পাইরেসি রোধে গঠিত র‌্যাবের টাস্কফোর্স সূত্রে জানা গেছে, সিনেমা মুক্তির আগে প্রুফ, এডিট হলে যাওয়াসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে বাংলাদেশে নির্মিত সিনেমা, নাটক পাইরেসি হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিনেমা তৈরির সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদের সঙ্গে যোগসাজশে সিনেমা মুক্তির আগেই পাইরেসি চক্রের হাতে মূল কপি চলে যায়। যা পরবর্তীতে নামে-বেনামে বিভিন্ন অনুমতিহীন অবৈধ টিভি চ্যানেল ও সারাদেশে এজেন্টদের মাধ্যমে হোলসেলে বিক্রি করে।আরও অভিযোগ রয়েছে, অন্তর্কলহের কারণে প্রযোজকদের কেউ কেউ সিনেমা পাইরেসি চক্রের সদস্যদের মদদ দিয়ে থাকে।অশ্লীলতা ও অডিও-ভিডিও পাইরেসি রোধে গঠিত র‌্যাবের টাস্কফোর্স এ ব্যাপারে অভিযান চালিয়ে সফলতা অর্জন করছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অভিযান চলমান। আমরা যখনই এ ধরনের কোনও তথ্য পাচ্ছি তখনই অভিযান চালাচ্ছি। এক্ষেত্রে কেউ ছাড় পাবে না।তিনি জানান, দেশের অনেকগুলো হলের সঙ্গে এসব পাইরেসি চক্রের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ ব্যাপারে চলচ্চিত্র নির্মাণে কর্তা ব্যক্তিদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। যেন সিনেমা মুক্তির আগে তাদের কাছ থেকে কপি হয়ে পাইরেসি চক্রের হাতে না যায়। অশ্লীলতা ও পাইরেসির সঙ্গে যুক্ত যার নামই বেরিয়ে আসবে তাদের বিরুদ্ধেই অ্যাকশনে যাবে র‌্যাব।জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের সংশ্লিষ্টরা জানান, পাইরেসি সম্রাট খ্যাত সেলিম খাঁনকে গ্রেফতারে অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চলছিল। গ্রেফতারের পর সে জানিয়েছে, নায়ক হতে না পারার ক্ষোভ ও অর্থলোভে পাইরেসির সঙ্গে যুক্ত হয় সে। শুরুতে সিডির দোকানে কাজ করে। একসময় নিজের সিডির দোকান দেয়। বেশ কিছু টাকার মালিক হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে সিনেমা তৈরির আদ্যোপান্ত জেনে নেয় সে। সেই অনুসারে সিনেমা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায়। গড়ে তোলে নিজস্ব সিন্ডিকেট। যার মাধ্যমে সিনেমা ‍মুক্তির পরপরই বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে সিনেমা মুক্তির আগেই মাস্টার কপি চলে আসে তার হাতে। যা সে একটা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তার সিন্ডিকেটের লোকদের কাছে বিক্রি করে।পাইরেসির পাশাপাশি সেগুলো প্রচারের জন্য অভিনব প্রতারণা শুরু করে সে। বিদেশি সম্প্রচার কেন্দ্রের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে নামে-বেনামে কয়েকটি আঞ্চলিক অবৈধ চ্যানেল খুলে বসে সেলিম। পাইরেসি করা সিনেমা, নাটকগুলো দিয়ে  তিন দিনের প্যাকেজ বানিয়ে চালাতো বলে জানায় র‌্যাব। পাইরেটেড নাটক, সিনেমাগুলো প্রচারের ফাঁকে অভিনব কায়দায় হারবালের বিজ্ঞাপন দিয়েও সে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিতো বলে জানা গেছে।র‌্যাব জানায়, রাজধানীর একটি বড় শপিং মল থেকে ৩০০টাকা করে হারবাল ওষুধ কিনতো। আর সেগুলোর বিজ্ঞাপন দিতো তার প্যাকেজ প্রোগ্রামে। যোগাযোগের জন্য দিয়ে দিতো নিজের নম্বর। আর সেলিম ৩০০ টাকায় কেনা হারবাল ওষুধ বিক্রি করতো ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায়।র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন, র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও ব্যাটালিয়ন সমূহের তৎপরতায় পাইরেসি ও অশ্লীলতা ছড়ানো সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কুখ্যাত ডন বিপ্লব, পাইরেসি তুষার, মো. বনি ইসলাম ওরফে নোবেলসহ মোট ২,৩৪২ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। মামলা হয়েছে ৭৯৩টি।বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ২৭টি ল্যাপটপ, ১০৫২টি সিপিইউ, ১৩৬৮টি সিডি/ডিভিডি রাইটার, ১৪৪টি হার্ডডিস্ক, ১১৬টি মেমোরি কার্ড, ৫২টি পেনড্রাইভ, ৬টি ল্যাপটপ চার্জার, ৮৫টি মাউস, ১৫২৭টি মনিটর, ১৮৭টি কেবল, ৫৯টি সাউন্ড বক্স, ৪৫টি মোবাইল, ৫১টি সিমকার্ড, ১টি স্কানার, ২টি প্রিন্টার, ১টি মোটরসাইকলে, ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭৩৪টি পার্নো/অশ্লীল সিডি, ২৬ লাখ ৫১ হাজার ২৩৮টি পাইরেটেড সিডি, ৩১৭টি ব্লু ফিল্ম ও কাটপিস রিল, ৮৪ হাজার ৭৩০ টি পোস্টার, ৪ লাখ ৮০ হাজার সিডির নকল লেভেল এবং লক্ষাধিক ব্ল্যাংক সিডি উদ্ধার করা হয়েছে।অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে পাইরেটেড নাটক সিনেমার ফাঁকে বিভিন্ন হারবাল সামগ্রীর কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপন দিয়ে নিরীহ মানুষদের বিভ্রান্ত করে ব্যবসায়িক ফায়দা লুটে নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ১ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে অভিযান চালিয়ে H Bangla ও Neha টিভি নামে দুটি অনুমোদনহীন চ্যানেলের সন্ধান পায় র‌্যাব। সেখান থেকে চ্যানেলের এমডি ইব্রাহীম হোসেন হাওলাদারসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানায় যায়, ইব্রাহীম হোসেন ও তার চক্রটিসহ আরও কয়েকটি সংঘবদ্ধ দল সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমার স্বত্ত কেনা ছাড়াই পাইরেসি করে সংশিষ্ট সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয় শিল্পীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে আসছে। পাইরেসিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে শিল্পীদের কাজ করতে হবে বলে মনে করেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ১৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) এফডিসিতে অশ্লীলতা এবং অডিও ও ভিডিও পাইরেসি রোধে গঠিত র‌্যাবের টাস্কফোর্সের সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্রে হাজারো সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে চলচ্চিত্র শিল্পীদেরই কাজ করতে হবে। একটা সময় ছিল যখন সরকার সমস্যা সমাধানে লিড দিত। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে আমাদের অবস্থা খারাপ ছিল। তখন সরকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সামনে থেকে লিড দিত। এখন সময় হচ্ছে নিজের সমস্যা সমাধানে নিজেদের লিড দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের রোল হবে আমাদের সহযোগিতা করা। হাজারো সমস্যার মাঝে গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধান সমস্যাগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে। এগুলো ধরে একে একে সমাধান করতে হবে।’

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top