প্রতি ৮ জন মহিলার মধ্যে একজনের স্তন ক্যান্সার হতে পারে এবং প্রতি ৩৬ জন আক্রান্ত নারীর মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা একজনের। এ মরণব্যাধির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে অক্টোবর মাসকে ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। ১০ অক্টোবর সকালে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও বিকেলে ছায়ানটে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশে বিশ্ব স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালিত হয়। দিবসটি কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রার আয়োজন করে ১৯টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম। ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী ও জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিউলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ খান রাসকিন বলেন, দেশের প্রায় ১৫ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং দুই তৃতীয়াংশ দেশের স্বাস্থ্য নেবার আওতার বাইরে। অথচ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কর্মসূচিতে ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনাতামূলক প্রচারপত্র বিলি করা হয়। জেগে উঠুন, জেনে নিন প্রতিপাদ্য নিয়ে গত বছর থেকে বাংলাদেশে ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের উদ্যোগে ১০ অক্টোবরকে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা গ্লোব ক্যানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এদেশে ২০০৮ সালে ১৭,৭৮১ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, যা মোট ক্যান্সার আক্রান্ত নারীর ২১.৬ শতাংশ। উক্ত বছর আক্রান্তদের মধ্যে ৮৩৯৬ জন মারা যায়। জনগণকে সচেতন করতে আলোচকরা বিশেষ কতকগুলো বিষয়ে লক্ষ্য রাখার কথা বলেন। সেগুলোÑ স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে- ১. বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। ২. স্তনে গ্রন্থির পরিমাণ অধিক হলে। ৩. অল্প বয়সে ঋতু¯্রাব হলে এবং বেশি বয়সে স্রাব বন্ধ হলে। ৪. কখনো সন্তান ধারণ না করলে। ৫. মেদবহুল দেহ, মোটা ভুঁড়ি ও অতিরিক্ত ওজন হলে। কারণ এর সঙ্গে হরমোনের সম্পর্ক থাকে। ৬. রক্ত সম্পর্কীয় কোনো আত্মীয় যদি স্তন, কোলন বা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। পরিবারের অতি নিকট আত্মীয় যদি (যেমনÑ মা, বোন, খালা, ফুপু) ৫০ বছর বয়সের আগেই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন অথবা পরিবারে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দুইয়ের অধিক হয় তাহলে এ রোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। ৭. দীর্ঘদিন একটানা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন করলে। ৮. ঋতুস্রাব বন্ধের (মেনোপজ) পর অনেকদিন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট বড়ি সেবন করলে। ৯. অতিরিক্ত লাল মাংস খেলে। ১০. এক স্তনে ক্যান্সার হলে। ১১. মদ্যপান। ১২. বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ালে। স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে : ১. নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে দেহের স্বাভাবিক ওজন বজায় থাকলে। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হালকা শারীরিক পরিশ্রম এ ঝুঁকি বহুলাংশে কমাবে। ২. শিশুকে পূর্ণ দুই বছর মায়ের দুধ খাওয়ালে। ৩. ৩০ বছরের মধ্যে ১-২টি সন্তান গ্রহণে ঝুঁকি কমে। ৪. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাংস, চর্বি ও শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে শাক-সবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়ালে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করতে হলে : ১. ২০ বছর বয়স হলেই প্রতি মাসে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা। ২. ৪০ বছর বয়স হলেই প্রতি বছর চিকিৎসক দ্বারা শারীরিক পরীক্ষা করা। ৩. চিকিৎসকের পরামর্শে আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ম্যামোগ্রাফি, এফএনএসি করা। ৪. ৪০ ঊর্ধŸদের ২-৩ বছর পর পর স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাফি করা হলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় সম্ভব। ৫. এমআর ম্যামোগ্রাফি : কম বয়সী ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের এমআর ম্যামোগ্রাফি করে স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং করা যায়। এতে কোনো তেজস্ক্রিয় রশ্মির ব্যবহার হয় না। নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করুন : স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা। প্রতি মাসে মাসিক শেষ হওয়ার দুই-তিন দিন পর প্রত্যেক মহিলা নিজেই পরীক্ষা করে দেখবেন তার স্তনে কোনো দলা বা চাকা আছে কিনা। নিজের শোয়ার ঘরে কিংবা বাথরুমের লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এ পরীক্ষা করতে হয়। সকাল বেলা পরীক্ষা করাই ভালো। আর যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গিয়েছে অর্থাৎ রজঃনিবৃত্তির পরে প্রতি মাসের প্রথম দিনেই পরীক্ষা করতে হবে। যাদের জরায়ু সার্জারি করে বাদ দেয়া হয়েছে তারাও প্রতি মাসের প্রথম দিনে স্তন পরীক্ষা করবেন।
Copyright Daily Inqilab
Share!