২০১৩ সালের ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকার সোমালিয়া উপকূলে একটি জাহাজ ডুবে যায়। সেই জাহাজে ছিল বিপুল পরিমাণ সাপের বিষ। জাহাজ ডোবার আগে আফ্রিকা উপকূলের কুখ্যাত জলদস্যুরা সেই বিষ লুট করে। তাদের কাছ থেকে লুটকৃত বিষ কিনে নেয় এক ব্যবসায়ী। একই বছরের ডিসেম্বরে মালদ্বীপে সেই সাপের বিষ নিলামে ওঠে। চোরাকারবারিরা দাবি করে, সেখান থেকে হাত ঘুরতে ঘুরতে সেই বিষ চলে আসে বাংলাদেশে। তারপর সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে তা ঢোকে পশ্চিমবঙ্গে। ঘটনাচক্রে সোমালিয়ার ওই ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশ এবং ভারতে (বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে) একের পর এক সাপের বিষ চোরাচালানের ঘটনা ঘটতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর (ডব্লুসিসিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি প্রথমে তাদের কাছে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলেও বর্তমানে চোরাকারবারিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা অনেকটাই নিশ্চিত যে, এই সাপের বিষের পিছনে আন্তর্জাতিক চক্র রয়েছে।উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে শিলিগুড়ির একটি হোটেলে ফাঁদ পেতে কয়েকজন চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করে বন অধিদফতর। তাদের কাছ থেকে প্রায় ১৫ পাউন্ড সাপের বিষ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে রাজ্যের বনদপ্তরের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ২০১৩ সালে ইতালি থেকে একটি জাহাজ দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছিল। সোমালিয়ার কাছে সেটিকে লুট করে জলদস্যুরা। তারপর সেটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়। চোরাশিকারিদের দাবি অনুযায়ী, সেই জাহাজ থেকে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ সাপের বিষ জলদস্যুরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করে। যার মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিক প্রায় ৩৫ কেস সাপের বিষ (১৫০-১৬০ পাউন্ড বা প্রায় ৮০ কেজি) কিনে নিয়েছিল মালদ্বীপের ওই নিলামে। বাংলাদেশে যাদের থেকে চোরাকারবারিরা এই সাপের বিষ কিনেছে, ওই ৩৫ কেস সাপের বিষ পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন হাত ঘুরে বাংলাদেশে পৌঁছায়। সেখান থেকেই এই সাপের বিষ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, চীনের চোরাবাজারে সাপের বিষের অনেক দাম, যাদের কাছে এই বিষ রয়েছে, তারা সেখানে বিক্রি না করে, তা এরাজ্যে তথা এদেশে বিক্রির চেষ্টা করছে কেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এই প্রশ্নগুলির কোন সদুত্তর গ্রেফতারকৃরা দিতে পারেনি। গোয়েন্দাদের দাবি, বাংলাদেশে যাদের কাছে এই সাপের বিষ এসেছিল, তারা আগে সেগুলি চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিক্রির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেখানে কোনও ক্রেতা না মেলায় তাদের নজর এবার পশ্চিমবঙ্গের দিকে।তবে যেহেতু চক্রটি বিদেশে থেকে কাজ করছে, তাই এবিষয়ে তদন্তের ক্ষেত্রে রাজ্য বন অধিদপ্তরের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই ইতোমধ্যে এবিষয়ে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডব্লিউসিসিবি’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রাজ্য বন অধিদপ্তর। ডব্লিউসিসিবি’র গোয়েন্দারাও এবিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন।
বিপুল পরিমাণ সাপের বিষ লুট
Share!