ইংলিশদের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাট হাতে আলো ছড়ালেন আব্দুল মজিদ। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই বিরামহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন। অবষেশে রবিবার নিজের প্রতিভাটা জানান দিলেন ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ৮২ রানের ইনিংস খেলার পথে তাকে পাখির চোখে পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মজিদের টেস্ট অভিষেক হয়ে যাচ্ছে-এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। তবে ভবিষ্যতের টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে মজিদকে দেখে রাখলেন হাথুরুসিংহে! হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জার্সিতে বিশ্ব মাতাবেন মজিদ।রবিবার ইংলিশদের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে মজিদের ব্যাটিংয়ে ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও আন্তর্জাতিক ম্যাচে মজিদ কতটা চাপ নিতে পারবেন, সে বিষয়ে কিছুটা প্রশ্ন রয়েই যায়।এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়ে উড়াল দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ওই দলে তার সঙ্গী ছিলেন বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময় মুস্তাফিজুর রহমান। ওই সফরে মুস্তাফিজ-মাজিদ কেউই আলো ছড়াতে পারেননি। যদিও দুই বছর পর মুস্তাফিজ তারকাখ্যাতি পেলেও মজিদ সেই আগের মজিদই আছেন। এই ইনিংসটির পর মজিদকে নিয়ে হয়তো নতুন করে ভাববে টিম ম্যানেজমেন্ট।রবিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের জার্সিতে খেলেছেন মজিদ। ইংলিশদের বোলারদের কোনও রকম পাত্তা না দিয়েই খেলেছেন ৯২ রানের ইনিংস। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে ১৪ চার ও এক ছক্কায় তিনি তার ইনিংসটি সাজিয়েছেন। লাঞ্চের পর অবশ্য তিনি আর মাঠে নামেননি। জানা গেছে পায়ের পেশীতে টান লাগার কারণেই বিরতির পর আর মাঠে নামেননি তিনি।তবে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ব্রডকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করেন মজিদ। গ্যারেথ ব্যাটিকে এগিয়ে এসে কভারের উপর দিয়ে মারা ছক্কাটি বেশ দৃষ্টিনন্দন ছিল। সবমিলিয়ে আব্দুল মজিদ কমপ্লিট ক্রিকেট খেলেছেন।১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহের পচা পুকুর পাড়ে জন্ম তার। ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠে ছোট বেলা থেকে খেলতে খেলতেই বড় হয়ে উঠেছেন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫, ১৭ পর্যায়ে খেললেও অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে খেলা হয়নি।পরবর্তীতে ময়মসিংহের স্থানীয় একাডেমিতে গুরু হাবিবুল ইসলামের দীক্ষা নেন তিনি। মজিদের গুরু অবশ্য অলকদা নামেই বেশি পরিচিত।ময়মনসিংহের মজিদের প্রথম ক্লাব সিরাজ মেমোরিয়াল। এরপর স্থানীয় এক বড় ভাইয়ের সৌজন্যে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে খেলার সুযোগ পান। সেবার প্রথম বিভাগে ছিল দলটি। আব্দুল মজিদ প্রথম বিভাগে প্রথমবারের মতো খেলে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। পরের বছর অবশ্য ঢাকা লিগে উঠে আসে প্রাইম দোলেশ্বর। যদিও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আব্দুল মজিদের অভিষেক হয় ২০১১ সালে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একাদশের হয়ে খেলেছিলেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে।অন্যদিকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ২০১৩-১৪ মৌসুমে অভিষেক হয় কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমির হয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে। ক্লাব ক্রিকেট নিজের প্রথম ম্যাচেই হাফসেঞ্চুরির দেখা পান মজিদ। শুধু তাই নয় শেখ জামালের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংস খেলে জয় তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।এছাড়া ২০১১ সালে আব্দুল মজিদের অভিষেক হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। এখন পর্যন্ত আব্দুল মজিদ ৪২টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। এর মধ্যে ৩৯টি ঢাকা বিভাগের হয়ে এবং তিনটি ম্যাচ সেন্ট্রাল জোনের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। এছাড়া ৬টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি তার রয়েছে ১৩টি হাফসেঞ্চুরি। এর সবগুলোই করেছেন ঢাকা বিভাগের হয়ে ২২ গজে নেমে।মজিদের সবেচেয়ে ভালো কেটেছে ২০১৪-১৫ মৌসুম। ওই মৌসুমে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৮৪০ রান। গত বছর ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ২৫৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।২০১৪-১৫ মৌসুমে লিগের সর্বোচ্চ সংগ্রহ (৭১৪)করে সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলে। আর তাতেই তার সামনে সুযোগ তৈরি হয় ক্যারিয়ান সফরে যাওয়ার। যদিও ওই সফরটা একদম ভালো কাটেনি।আব্দুল মজিদ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে। তাদের বিপক্ষে ৭ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি ও ১ হাফসেঞ্চুরির মাধ্যমে ৭২.২৮ গড়ে ৫০৬ রান করেছেন।
ইংলিশদের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাট হাতে আলো ছড়ালেন আব্দুল মজিদ
Share!