সবুজ চা আবাদে পার্বত্য অঞ্চল ও সিলেটের পর তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এখানকার চা-বাগানের একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো, প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের ছোট ছোট চা-বাগানও আছে এখানে। কৃষকদের বড় একটা অংশ এখন চা আবাদে জড়িত।গত কয়েক দশকে দ্রুত বিস্তার লাভ করা তেঁতুলিয়ার চা অর্গানিক তথা আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে ইতিমধ্যে তা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, তেঁতুলিয়ায় ১ হাজার ২৯০ হেক্টরের বেশি জমিতে এখন চাষ হচ্ছে সবুজ চা।কিন্তু অভিযোগ উঠছে, চা-বাগানকে ঘিরে গড়ে ওঠা চা-কারখানাগুলো স্বেচ্ছাচারিতা করছে চা-চাষিদের সঙ্গে। ফলে বিপাকে পড়েছেন চা-চাষিরা, যার প্রভাব পঞ্চগড়ের চা-শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে।চাষিদের অভিযোগ, কারখানাগুলোর সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তাদের বাগান থেকে আহরিত চা-পাতার। শুধু তা-ই নয়, কারখানায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া পাতা ওজনের সময় শতকরা ৩০-৪০ এমনকি কখনো ৭০ শতাংশ কেটে মাত্র ৩০ শতাংশের দাম দিচ্ছে কারখানাগুলো। ফলে বাধ্য হয়ে পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের এই সবুজ চা-পাতা। এতে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি চা আবাদে অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে চাষিদের মধ্যে। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে প্রথম এ এলাকায় টিটিসিএল নামের একটি কোম্পানি ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করে সবুজ চা আবাদ। এরপর রওশনপুরে কাজী অ্যান্ড কাজী টি এসেস্ট লিমিটেড বৃহৎকারে অর্গানিক পদ্ধতিতে সবুজ চা আবাদের সুবাদে উপজেলায় বেশি কিছু চা-বাগান গড়ে তোলে। উত্তরের এই চা বিপ্লবে সিলেট ও চট্টগ্রামের চা-কারখানার মালিকরাও জমি কিনে চা চাষ শুরু করে।এ বিপ্লবের দিকে ঝুঁকে পড়ে সাধারণ কৃষকরাও। ধান, পাট, আখ, ভুট্টা, গমসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি চা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। গড়ে ওঠে ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট-বড় চা-বাগান। তেঁতুলিয়ায় ক্ষুদ্র চা-বাগানের সংখ্যা হাজারের বেশি। রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির ১১টি বড় চা-বাগান। এসব বাগানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এখানে চা কারখানা। টিটিসিএল চা কারখানা, গ্রীণ এগ্রো কেয়ার চা কারখানা, করতোয়া চা কারখানা, নর্থ বেঙ্গল কারখানা ও ভজনপুর ফিলিং স্টেশনের মালিক আব্দুল জব্বারের চা কারখানা উল্লেখযোগ্য।
সবুজ চা আবাদে পার্বত্য অঞ্চল ও সিলেটের পর তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়
Share!