Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

সভাপতিমণ্ডলীতে বর্তমানে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ঠাঁই হবে কি?

আগামী ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য গঠিত হবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। নতুন কমিটির প্রেসিডিয়াম বা সভাপতিমণ্ডলীতে বর্তমানে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ঠাঁই হবে কি না-এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা আছে আওয়ামী লীগসহ রাজনীতি-সচেতন মহলে। দেশময় পরিচিত এ তিন নেতাই এখন রয়েছেন আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বাইরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, সম্পাদকমণ্ডলী ও সভাপতিমণ্ডলী নিয়ে গঠিত কমিটি হয়ে থাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। এই নির্বাহী কমিটিই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা কেউ দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নন। সংগঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় উপদেষ্টা পরিষদের ভূমিকা একেবারেই নগণ্য। কালেভদ্রে উপদেষ্টা পরিষদের দুয়েকটি সভা আহ্বান করা হয়, সেখানে দলের সভাপতি প্রয়োজনে কিছু উপদেশ গ্রহণ করে থাকেন।
আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। এদের মধ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাম ধারার রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগে এলেও সত্তর-তিয়াত্তর সালের সংসদ নির্বাচনে গোটা দেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ারের সময়ও ন্যাপের দলীয়  কুঁড়েঘর প্রতীকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছিলেন। স্বাধীনতার পর সংবিধান রচনা কমিটিতে একমাত্র বিরোধীদলীয় সদস্য ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান, আইনজ্ঞ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এক সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন।আমির হোসেন আমুর রাজনীতি শুরু বরিশাল বিএম কলেজে পড়াশোনার সময় ছাত্রলীগের মাধ্যমে। কলেজ সংসদের নির্বাচিত নেতা ছিলেন। আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। সবশেষ ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। বর্তমানে সরকারের শিল্পমন্ত্রী।বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদেরও রয়েছে এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ডাকসুর ভিপি ছিলেন, ১১ দফা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, জাতির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধি তারই দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গত কাউন্সিলে বাদ পড়েন সভাপতিমণ্ডলী থেকে। এ তিন নেতার সঙ্গে সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ পড়েছিলেন প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাকও। একই কারণে বাদ পড়েন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিলও।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে বিরোধের জেরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কারাবন্দি হন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। এ সময় রাজনীতি থেকে দুই নেত্রীকে নির্বাসনে দেওয়ার গুজব ওঠে। আলোচনায় আসে ‘সংস্কার’ শব্দটি। বিএনপিতে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার প্রক্রিয়ায় প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখেন আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। তবে গুজব ওঠে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমু, রাজ্জাক, তোফায়েলকে মন্ত্রী করা হয় এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে করা হয় প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা।২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর এদের কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। এরপর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। দলের ওই কাউন্সিলে এই চার আলোচিত নেতাকে বাদ দেওয়া হয় সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলী থেকে। তাদের রাখা হয় উপদেষ্টা কমিটিতে। সূত্র জানায়, উপদেষ্টা কমিটিতে নিজের অন্তর্ভুক্তিকে অপমান হিসেবেই দেখে আসছেন তোফায়েল আহমেদ। সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত উপদেষ্টা কমিটির কোনো সভায় উপস্থিত হননি তোফায়েল আহমেদ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে শেখ হাসিনার ডাকে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন আমু ও তোফায়েল। সক্রিয় হন সরকারের তত্কালীন সঙ্কট সামাল দিতে।ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থী তকমা পাওয়া এই তিন নেতাকে ফের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির পর কথা ওঠে হয়তো দলের আগামী কাউন্সিলে সভাপতিমণ্ডলীতে ঠাঁই পেতে পারেন তারা। শেখ হাসিনা কী সিদ্ধান্ত নেবেন আলোচিত এই তিন নেতার বিষয়ে-তা দেখতে উত্সুক হয়ে আছে দেশের রাজনৈতিক সচেতন মহল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত এই আলোচনা এখন তুঙ্গে। যদিও আওয়ামী লীগের অফিসপাড়ায় এ তিন নেতাকে নিয়ে আলোচনায় কোনো ইতিবাচক কথা নেই। সেখানে শেখ হাসিনার একটি উক্তিই ঘুরে-ফিরে আলোচিত হচ্ছে-ক্ষমা করেছি, ভুলিনি। ওয়ান ইলেভেনে দলীয় কতিপয় নেতার ভূমিকা সম্পর্কে শেখ হাসিনা এ কথাটি বলেছিলেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top