২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইমরুল প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সাড়ে ছয় বছরেরও বেশি সময় পর কাল পেলেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা। ইংল্যান্ডের ৩০৯ রান তাড়া করে তাতে জয়ের স্বপ্নও দেখছিল বাংলাদেশ দল। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচ মানেই এখন সিংহের মুখে বাঘের থাবা।কিন্তু যেদিন ভাগ্যে থাকে না, সেদিন হতে হতেও কিছু হয় না। নইলে মুহূর্তেই ভোজবাজির মতো কেন ঘুরে যাবে ম্যাচ? ৪ উইকেটে ২৭১ থেকে বাংলাদেশ দল অলআউট হয়ে যাবে ২৮৮ রানে! মাত্র ১৭ রানে পড়ে যাবে শেষ ছয়টি উইকেট? ওয়ানডেতে নিজের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ইনিংসটি খেলার পথে হাতের পেশিতে টান পড়ল সাকিবের। পরের বলেই পুল শট মারতে গিয়ে আউট। ৫১ বলে ৩৯ রানের সহজ সমীকরণটি এরপরই হয়ে গেল কঠিনতর, কেন? কিংবা ৮১ রানের সময় পায়ের মাংসপেশিতে পড়া টান নিয়েও সেঞ্চুরি করে কেন ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে পারবেন না ইমরুল? ক্রিকেটে এসব ‘কেন’ বরাবরই রহস্য। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজা খুবই জরুরি। দীর্ঘ সাড়ে আট বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা মোশাররফ হোসেনের কি আসলেই এখন এই পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলার অবস্থা আছে? আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের মতো কালও প্রয়োজনের সময় দিশা খুঁজে পায়নি তাঁর ব্যাট। এ রকম একটা ম্যাচে নয় নম্বর ব্যাটসম্যান ১৮ বলে ৭ রান করে অপরাজিত থাকলে ম্যাচ জেতার আর পথ থাকে না। এর আগে ফিল্ডিংয়েও ছেড়েছেন দু-দুটি সহজ ক্যাচ। ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা তৃতীয় ওয়ানডে জয়ের সম্ভাবনা মাথা ঠুকে মরল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাটিতে। জয়ের এত কাছে গিয়েও পরাজয়ের গ্লানিতে ডুবে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কমই আছে। তবে পরিসংখ্যান একটু সান্ত্বনা দিতেই পারে। বাংলাদেশ দলের তিন শর ওপর রান তাড়া করে জেতার নজিরই যে আছে মাত্র তিনটি! তীরে এসে তরি ডোবার দুঃখ ভুলে ‘পরাজয়েও প্রাপ্তি’ খোঁজার পুরোনো অভ্যাসটি তাই সাময়িক ফিরিয়ে আনা যায়। প্রস্তুতি ম্যাচে পাওয়া সেঞ্চুরির আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে থাকা ইমরুলের ব্যাটিং, সাকিবের ৫৫ বলে ৭৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস এবং পঞ্চম উইকেটে দুজনের ১১৮ রানের জুটি এই হারেও অলংকারের দ্যুতি হয়ে আছে। আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে এই সিরিজেই আবারও সিংহের মুখে বাঘের থাবা দেখার কাল ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই মিরপুরে আলোচনা—এই উইকেটে তিন শ করেও কেউ নিরাপদ থাকবে না। ইংল্যান্ড টসে জিতে আগে ব্যাটিং নেওয়ার পর সম্ভাবনাটা শঙ্কায় পরিণত—ইংলিশরা সাড়ে তিন শ না করে যাচ্ছে না। বাংলাদেশে আসার মাস দেড়েক আগে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের (৪৪৪) রেকর্ড গড়া দল আরেকটি ব্যাটিং উৎসবের সুযোগ নিশ্চয়ই ছাড়তে চাইবে না। কিন্তু ইংল্যান্ডের ৮ উইকেটে করা ৩০৯ রানে তাদের ব্যাটসম্যানদের যা কৃতিত্ব, তার চেয়ে কম নয় বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ‘অবদান’। সাব্বির রহমানের সরাসরি থ্রোতে জনি বেয়ারস্টোর রান আউট বাদ দিলে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ের দুর্বলতা ছিল দৃষ্টিকটু। ক্যাচ মিসের তো রীতিমতো প্রদর্শনীই হলো! সহজ ক্যাচ বানিয়ে নেওয়া যেত; এমন অনেক সম্ভাবনা নষ্ট করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন, মোশাররফ হোসেন, তাসকিন আহমেদরা। বলের পেছনেই যেতে পারেননি কেউ। তবে এসব ব্যর্থতাও ‘ক্ষমা’ পেয়ে যাচ্ছে আরও সহজ তিনটি ক্যাচ হাতছাড়া করার দৃশ্যের সামনে।ব্যক্তিগত ৬৯ রানের সময় তাসকিনের বলে বেন স্টোকস ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন মিড অনে। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে এ রকম ক্যাচ মিস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ মিস করলেন। মাশরাফি বিন মুর্তজার পরের ওভারে আবারও ‘পুনর্জন্ম’ স্টোকসের ইনিংসের। এবার এক্সট্রা কাভারে ফিল্ডার মোশাররফ। তাঁর হাত থেকেই পড়েছে অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা বেন ডাকেটের সহজ ক্যাচও।৫৯ রানে জীবন পাওয়া ডাকেট এরপর আর ১ রান করেই শফিউল ইসলামের লো ফুলটসে বোল্ড। কিন্তু দুবার জীবন ফিরে পাওয়ার পুরো সুযোগ কাজে লাগালেন স্টোকস। ৪৪টি ওয়ানডেতে যা পারেননি, কাল ৪৫তম ওয়ানডে খেলতে নেমে সেটাই করে দেখালেন। ঢাকার মাঠে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। মাশরাফির স্লোয়ারে ডিপ মিড উইকেটে সাব্বিরের ক্যাচ হওয়ার আগে স্ট্রোক ঝলমলে ১০১ রানের ইনিংসে ৮ বাউন্ডারির সঙ্গে স্টোকসের ছক্কা ৪টি। কোনোটা উড়ে গিয়ে পড়েছে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে, কোনোটা সাইট স্ক্রিনের গায়ে। ৬৩ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর চতুর্থ উইকেটে ডাকেটের সঙ্গে তাঁর ১৫৩ রানের জুটিতে ইংল্যান্ডের রান ২০০ হয়ে যায় ৩৫তম ওভারেই।দলকে তিন শর ওপারে নেওয়ার বাকি কাজটা বলতে গেলে একাই করেছেন অধিনায়ক জস বাটলার। শেষ তিন-চার ওভারে রীতিমতো ঝড় তুললেন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। সেই ঝড়েই শেষ ১০ ওভারে এল ৮৯, যার ৬১-ই এসেছে শেষ ৫ ওভারে।ম্যান অব দ্য ম্যাচ তবু জ্যাক বল। ৫ উইকেট নিয়ে অভিষেক ওয়ানডেটাকে স্মরণীয় করে রাখলেন এই পেসার। বাংলাদেশ দলকে আবারও শেষ ১০ ওভারে ধসিয়ে দেওয়ার কৃতিত্বটাও তাঁর। ৫ উইকেটের তিনটাই বল নিয়েছেন ওই সময়ে।
বাংলাদেশ দলকে আবারও শেষ ১০ ওভারে ধসিয়ে দেওয়ার কৃতিত্বটা জ্যাক বলের
Share!