বাংলাদেশের ফুটবলারদের পায়ে গোল নেই, এটি নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। কিন্তু কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গোল নষ্ট করার যে মহড়া তাঁরা দিলেন, এরপর আর বসে থাকার সুযোগ নেই। দেশজুড়ে অচিরেই স্ট্রাইকারের খোঁজে নেমে পড়া উচিত বাফুফের কর্তাদের।দুই হাত সামনে থেকে ভুটানের গোলরক্ষক হরি গুরুংয়ের গায়ে মেরেছেন শাখাওয়াত রনি। অন্তত চারটি সহজ সুযোগ হারিয়েছেন শাখাওয়াত। গোল নষ্ট করেছেন জীবন, তপু, জুয়েল রানা, জাফর। ডিফেন্ডার তপু বর্মণও ম্যাচের শেষ দিকে দুর্বল হেডে বল তুলে দিয়েছেন গোলরক্ষকের হাতে। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে অন্তত পাঁচটি গোল করতে পারত বাংলাদেশ!আসলে গোল করা অভ্যাসের ব্যাপার। ভুটানের বিপক্ষে এশিয়ান কাপের এই জীবন-মরণ প্লে-অফে বাংলাদেশের আক্রমণভাগে যাঁরা খেললেন, তাঁরা কেউই গোল করতে অভ্যস্ত নন। গত ২০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশ ৫৫ গোল খেয়ে দিয়েছে মাত্র ১১টি। ৪ জয়ের বিপরীতে ৩ ড্র, ১৩ হার।এই পরিসংখ্যানই তুলে ধরছে আসল ছবিটা। এবারের লিগের ছয় ম্যাচ শেষে শাখাওয়াত রনি গোলের খাতাই খুলতে পারেননি। সোহেল রানাও তা-ই। বিজেএমসির একাদশেই তাঁর জায়গা মেলে না নিয়মিত। বদলি হিসেবে নামা জীবনও মৌসুমে এখনো গোল পাননি। জাতীয় দলে আট বছর পর ফিরে আসা বিজেএমসির তপুর নামের পাশেও লিগে গোল নেই। একটি করে গোল পেয়েছেন জুয়েল রানা, জাফর ও আবদুল্লাহ।এই যদি হয় একটি দলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের ঘরোয়া লিগের খেরোখাতা, তাহলে আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁদের কাছে গোল চাওয়াই তো বাড়াবাড়ি। সে কারণেই দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় একতরফা খেলেও ভুটানের জালে বল পাঠানো গেল না। ঘরের মাঠের সুবিধাটা নেওয়া গেল না এতটুকু। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্রর হতাশা ঘিরে ধরল বাংলাদেশকে।গোল এনে দিতে একা রুবেল মিয়া ডান প্রান্ত দিয়ে বারবার ঢুকে ক্রস করেছেন। সঙ্গী না পেয়ে কখনো কখনো একাও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেননি রুবেল।এখানেই সফল ভুটান। টার্ফে খেলা দলটি কাদামাঠে সুবিধা করতে পারেনি। তাতে কী, অ্যাওয়ে ম্যাচে গোলশূন্য ড্র নিয়ে অনেকটা নির্ভার হয়ে থিম্পু ফিরে যাচ্ছে ভুটান। কিন্তু বাংলাদেশ দল? ১০ অক্টোবরের ফিরতি ম্যাচ খেলতে গেলে থিম্পুর পাশের পাহাড়ের সমান চাপ তাদের মাথায় থাকবে। এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে যেতে লাল–সবুজের শেষ ‘লাইফলাইন’ ভুটানের মাঠে অন্তত ড্র। সেটিও স্কোরলাইনে অঙ্ক বসিয়ে। ১-১, ২-২ বা ৩-৩ হলেই চলবে। জিতলে কথাই নেই। গোলশূন্য থাকলে যেতে হবে টাইব্রেকারের ভাগ্যপরীক্ষায়।তবে দলে সেন্টফিটের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কতটা ফল আসবে বলা কঠিন। মাঝমাঠে মামুনুলকে বাদ দিয়ে কোচ আস্থা রাখেন কদিন আগে তৃতীয় বিভাগ থেকে হঠাৎ শীর্ষ ফুটবলে উঠে আসা আবদুল্লাহ ও জাফরের ওপর। কিন্তু এঁদের কাল সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আক্রমণভাগে সোহেল রানা তো বলই ধরতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাঁকে মাঠে রাখা তাই অবাক করা ব্যাপারই।নিষ্প্রভ সোহেল রানাকে তোলার পর বাংলাদেশের আক্রমণের গতি এবং ধার দুটিই বাড়ল। তাই মালদ্বীপের কাছে পাঁচ গোলের লজ্জার পর ভুটানকে নিয়ে যে শঙ্কাটা ছিল, সেটি উধাও হয়ে যায় এই অর্ধে। শুরুর কিছু সময় ভুটান আক্রমণে এসে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছিল। তাদের উইঙ্গার চেনচোর ওপর চোখ রাখছিল বাংলাদেশ। তবে চেনচো দু-একবার আতঙ্ক ছড়ানো ছাড়া ম্যাচে ছিলেন অদৃশ্য।সম্প্রতি থিম্পুতে এই ভুটানকে প্রীতি ম্যাচে ১৮ মিনিটেই ৩-০ করে দ্বিতীয় সারির দল নিয়েও ভারত জিতেছিল। সেই দলকেই বাংলাদেশ ঘরের মাঠেও হারাতে পারল না স্রেফ একজন যোগ্য গোলদাতার অভাবে। গোলদাতার খোঁজে তাই এখন নামতেই হচ্ছে!
বাংলাদেশ দল: রুবেল মিয়া, আবদুল্লাহ, জাফর (জীবন), আশরাফুল রানা, রায়হান, তপু বর্মণ,শাখাওয়াত রনি মিশু, মামুন মিয়া, শরিফ (জুয়েল রানা), সোহেল রানা (তপু),