“তোমরা পানাহার কর রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে ঊষার শুভ্ররেখা সুস্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হওয়া পর্যন্ত। অতঃপর রাতের আগমন পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর”। (আল-কোরআন, সূরা বাকারা)
সেহরি শব্দটি উর্দু। সুহুর আরবি শব্দ, এর শাব্দিক অর্থ রাত জাগরণ, নিদ্রা ভঙ্গ, ঘুম থেকে জেগে ওঠা ও রাত জাগা ইত্যাদি। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুবেহ সাদিকের পূর্বে ভোররাতে যে খাবার খাওয়া হয় তাকে উর্দুতে সাহরি আর আরবিতে সুহুর বলা হয়। প্রভাতের আলোর সাদা রেখা প্রকাশের সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পরেরদিন রোজা রাখার উপবাসের উদ্দেশ্যে শেষ রাতের পানাহার করা জরুরি। শেষ রাতে না খেলে দীর্ঘ সময়ের উপবাস বা অনাহারের কারণে শরীর কাহিল-দুর্বল হতে পারে। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মু’মিন ঈমানদারদের শারীরিকভাবে দুর্বল করা আল্লাহর ইচ্ছা উদ্দেশ্য নয়, আল্লাহতায়ালা মাহে রমজানের দিনের বেলা পানাহার নিষিদ্ধ করেছেন, সেজন্য রাতের শেষাংশে প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করা যুক্তিসঙ্গত, রাতে ক্ষুধা না থাকলেও কিছু খাওয়া উচিত। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা সেহরি খাও যদি তা এক ঢোক পানিও হয়। অন্যত্র বলা হয়েছে, তোমরা সেহরি খাও, যদি তা এক লোকমাও হয়।’ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা পানাহার কর রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে ঊষার শুভ্ররেখা সুস্পষ্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হওয়া পর্যন্ত। অতঃপর রাতের আগমন পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর।’ ওই আয়াতের আলোকে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার বিধান রয়েছে। সেহরি খাওয়া সুন্নত। তবে রোজা রাখা বা কবুল হওয়ার জন্য সেহরি খাওয়া শর্ত নয়। যেহেতু রাসূল (সাঃ) নিজে সেহরি খেয়েছেন এবং অন্যদেরকে তার জন্য তাগিদও দিয়েছেন সেহেতু সেহরি খাওয়ার মাঝে অধিক সওয়াব ও কল্যাণ নিহিত আছে। আরো আছে প্রভূত রহমত ও বরকত। আমাদের মাঝে অনেক ভাই-বোন আছেন যারা রাতে সেহরি খেতে উঠা পছন্দ করেন না। একবারে রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। তারা হয়ত জানেন না যে সেহেরী খাওয়ায় কি বরকত আছে। আসুন তাহলে জেনে নিই সেহেরীর মাহাত্ব এবং কিছু উল্লেখযোগ্য ফযিলতঃ 👌রসূল (সা) এর হাদীস অনুযায়ী সাহরি খাওয়া রহমতস্বরূপ। সহীহ বুখারীর কিতাবুস সিয়াম এর ১৯২৩ নং হাদীসে রসূল (সা) বলেন, তোমরা সাহরি খাও। কারণ সেহরি মধ্যে রয়েছে বরকত। সাহরি হলো রাতের শেষ ভাগের সুবহে সাদিকের পূর্বে খাদ্য গ্রহণ।
👌রসূল (সা) সাহরি খাওয়াকে মুসলিম ও আহলে কিতাবদের রোজা পালনের পার্থক্যের নির্দেশস্বরূপ বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিম এর কিতাবুস সিয়ামে ৩নং খন্ড এর ২৪১৩ নং হাদীসে এসেছে, আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত, রসূল (সা) বলেছেন আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের রোজার পার্থক্য হচ্ছে সাহরি খাওয়া।
👌সিলসিলাহ আস-সহিহাহ্ এর ৩য় খন্ডের ১০৪৫ নং হাদীসে আরো উল্লেখ আছে রসূল (সা) বলেছেন, আল্লাহ্র রহমত তিনটি জিনিসের উপর পতিত হতে থাকে, এর মধ্যে একটি হলো সাহরি। একই গ্রন্থের অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে- রসূল (সা) বলেছেন, রহমত বরকত কেবল দুটি বিষয়ের জন্য, প্রথমটি হলো- সাহরি, দ্বিতীয়টি হলো- ওজনে সঠিক পরিমাপ। (হাদীস ১৯২১) 👌আরো অনেকগুলো হাদীসে রসূল (সা) সেহরি ফাজিলাত সম্পর্কে বলেছেন এবং সাহরি খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। সহীহ আল জামে –এর ১ম খন্ডের ৩৬৮৩ নং হাদীসে এসেছে একজন সাহাবী রসূল (সা) কে সেহরি ফাজিলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, রসূল (সা) বলেন, সাহরিতে অনেক রহমত আছে, সুতরাং তোমরা তা ত্যাগ করো না।
👌মুসনাদে আহমাদ-এর ১৭তম খন্ডের ১১০৮৬ নং হাদীসে এসেছে, রসূল (সা) বলেন, সাহরি হলো রহমতস্বরূপ। সুতরাং তোমরা এটা ত্যাগ করো না, অন্তত এক গ্লাস পানি দিয়ে হলেও সাহরি কর। কেননা যে ব্যক্তি সাহরি খায় আল্লাহ্ তাকে নিজ হাতে রহমত দান করেন।
👌একই বর্ণনা অনুযায়ী সুনান আবূ দাউদ এর ২য় খন্ডের ২৩৩৭ নং হাদীসে এসেছে, একজন লোক রসূল (সা) এর নিকট সেহরি সময় এলেন। তখন রসূল (সা) তাকে বললেন, সাহরি খাও, কেননা এটা হলো রহমতস্বরূপ।
👌সেহরির সময়টা হলো বরকতময়, সেহরি ফাজিলাত সম্পর্কে আরো অনেক হাদীসে বর্ণনা এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সাহরি হলো উম্মাতের জন্য রহমতস্বরূপ। এটা নিয়ামত। 👌তাই নাবী করিম (সা) এটা ত্যাগ করেন নি। বরং সর্বদাই সাহরি খেয়েছেন। অতএব মুসলিমদের উচিৎ রোজা রাখলে অবশ্যই সাহরি খাওয়া এবং এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত না হওয়া।
সেহরির গুরুত্ব ও ফযিলত
Share!