কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার জামা-কাপড়, শরীরের অংশবিশেষ ও রক্তে ৩ ব্যক্তির শুক্রাণু মিলেছে। সিআইডি কুমিল্লা সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ডিএনএ প্রতিবেদন সরবরাহের জন্য সিআইডি কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন।তনুর লাশ আদালতের নির্দেশে গত ৩০ মার্চ কবর থেকে উত্তোলন করে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। মামলার তদন্তের স্বার্থে তনুর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তদন্ত সংস্থা সিআইডি। কিন্তু পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য তনুর লাশ কবর থেকে উত্তোলনের ৪৮ দিন অতিবাহিত হলেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তনুর কাপড়, দাঁত, নখের ডিএনএ ও ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রতিবেদন চেয়ে সিআইডির কাছে চিঠি পাঠায়। কিন্তু ওই প্রতিবেদন সরবরাহে সিআইডি অপারগতা প্রকাশ করে আসছিল।সর্বশেষ রবিবার ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমের কাছে চিঠি পাঠান দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের সভাপতি ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা ওরফে কে পি সাহা। ওই চিঠিটি অবগতির জন্য কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও প্রেরণ করা হয়। ওই পত্রে সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য পুনরায় কবর থেকে লাশ উত্তোলনের পর তদন্ত সংস্থা সিআইডি কর্তৃক সংগৃহীত নমুনার ৪টি দাঁত, ৪টি ভেজাইন্যাল সোয়াব, ডিএনএ অ্যানালাইসিস ও পরীক্ষার প্রতিবেদন চাওয়া হয়।এদিকে সিআইডি কর্তৃক সংগৃহীত ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে আদালতে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হলেও তা আমলে নেননি আদালত। সূত্র জানায়, মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে যেকোনো আবেদন করার এখতিয়ার তদন্তকারী কর্মকর্তার। তদন্তকারী কর্মকর্তা চাইলে তিনি এ প্রতিবেদন দিতে পারেন। এ বিষয়ে সদর কোর্টের জিআরও বাদল রায় সাংবাদিকদের জানান, চিকিৎসক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি পাঠান আর আদালতকে ওই চিঠির অনুলিপি দিয়েছেন। আদালতের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার একমাত্র এখতিয়ার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার, চিকিৎসকের নয়। ওই চিঠির কপি আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এদিকে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তের ৪৮ দিন পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড।সূত্র জানায়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের সব কাগজপত্র ফরেনসিক বিভাগে এলেও ডিএনএ প্রতিবেদন চাওয়ার নামে মেডিক্যাল বোর্ড কালক্ষেপণ করছে। তবে এ বিষয়ে তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত মেডিক্যাল বোর্ডের সভাপতি ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা জানান, আমরা ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ৩ সদস্যের সমন্বয়ে প্রস্তুত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দিতে পারব বলে আশা করছি।এদিকে সিআইডি কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের জানান, সোহাগী জাহান তনুর কাপড়, শরীরের অংশবিশেষ, ভেজাইনাল সোয়াব ও রক্তের ডিএনএ প্রতিবেদনে ৩ ব্যক্তির শুক্রাণু পাওয়া গেছে। কাপড়ে থাকা রক্ত তনুর বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এবং মামলার তদন্তের স্বার্থে মেডিক্যাল বোর্ডকে ডিএনএ প্রতিবেদন সরবরাহের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তনুর ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত
Share!