বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। পুরোনো বছরের ব্যর্থতা ও গ্লানি ভুলে আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখি। বরণ করে নিই বাংলা নববর্ষকে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে উৎসবে উৎসবে দিনটি মুখর করে তুলতে কতই না আয়োজন।বাঙালির এ নিজস্ব সংস্কৃতির উৎসবের শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করার মধ্য দিয়ে। তবে গত বছরের বর্ষবরণে টিএসসিতে যৌন হেনস্তার মতো ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বছর ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে।বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গত ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইনকে আহ্বায়ক করে ৩৪ সদস্যের বাংলা নববর্ষ-১৪২৩ উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনকে এই কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।এ ছাড়া শৃঙ্খলা উপকমিটি ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে।অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন বলেন, ‘কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশেষত, ১৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলো ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকবে। ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, চার শতাধিক বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট মোতায়েন থাকবে। জরুরি ঘোষণার জন্য মাইকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকায় স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি রাত ৮টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে না। রাজু ভাস্কর্যের পাশে পার্কের গেট ও ছবির হাটের গেট বন্ধ থাকবে।’পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা নববর্ষবরণে চারুকলা অনুষদ থেকে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।এ বছর ‘মা ও শিশু’কে চেতনায় ধারণ করে ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তর তর হে’ প্রতিপাদ্য সামনের রেখে শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে বের হয়ে রূপসী বাংলা হোটেল চত্বর ঘুরে আবার চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে।চারুকলা ইনস্টিটিউটে দিনব্যাপী চলবে পুতুলনাচ ও নাগরদোলা। এ ছাড়া বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল বাংলা বিভাগ ও বাংলা অ্যালামনাইয়ের উদ্যোগে কলাভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।সংগীত বিভাগ সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজন করবে সংগীতানুষ্ঠানের। এ ছাড়া থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে পটগান ও দেশের গান। মলচত্বর এলাকায় অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে থাকবে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন।হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে খাবারের আয়োজন। তবে ব্যান্ড সংগীত ও কনসার্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে।নির্বিঘ্নে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে প্রস্তুতি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি নিষিদ্ধসহ ক্যাম্পাসে কনসার্ট, লাউড স্পিকারে গান বাজানো, ব্যান্ড সংগীত পরিবেশন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার স্বার্থে ডিএমপির সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য স্থাপন করা হয়েছে ‘ওয়াচ টাওয়ার’।যৌন হেনস্তার মতো ঘটনা এড়াতে ছাত্রসংগঠনগুলো গঠন করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল।এ ছাড়া পয়লা বৈশাখের সব আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবার সহযোগিতা কামনা করেছে।
বর্ষবরণে নিরাপত্তা জোরদার
Share!