রোগ নিরাময়ের জন্য অপরিহার্য যে ওষুধ, বাজারের সেই ওষুধের প্রায় ১০ শতাংশই এখন ভেজাল। এমন তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মনোনীত বিশেষজ্ঞ দলের।সমস্যার গভীরতা উপলব্ধি করে কমিটির সদস্যরা স্বয়ং মাঠে নেমেছেন। মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করে ওষুধের প্রকৃত চিত্র বের করার জন্য সংসদীয় কমিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি দল গঠন করে। ওই দল বেশ কয়েক মাসের গবেষণা শেষে জানায়, দেশের বাজারে প্রায় ১০ শতাংশ ওষুধ ভেজাল, নকল কিংবা অনুমোদনহীন।একটু খেয়াল না করলেই দোকানে ঢুকে যাচ্ছে ভেজাল ওষুধ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একটি গ্রামের বাজারে ওষুধ বিক্রেতা রফিক বলেন, ‘এমন কিছু ওষুধ আছে, যেগুলে খেলে বোঝা যায় এগুলো খেলে কোনো কাজ করে না। মোড়কটা দেখতে একই রকম, কিন্তু ভেতরে অন্য ওষুধ।’পরিস্থিতি এখন আর হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ওষুধ বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক বলেন, ‘প্রতিবছর ১৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ আমরা বিক্রি করি আমাদের দেশে। আমাদের দেশের প্রিন্টিং টেকনোলজি এত উন্নত যে আপনি বুঝবেনই না, কোনটা নকল আর কোনটা আসল। সর্বোচ্চ ক্ষতি তো মৃত্যু, আর কম ক্ষতি হলো অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রিক, আলসার। একটা পর্যায় আসবে, যখন লিভার অ্যাফেক্টেড হবে। সেই লিভার থেকে কিডনি অ্যাফেক্টেড হচ্ছে। লিভার ও কিডনি যদি ভালো না থাকে, তাহলে তো মানুষ বাঁচবে না।’এ বিষয়ে ড. ফারুক আরো বলেন, ‘অ্যান্টিক্যানসার ড্রাগস, একটা মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত, তার ওষুধটাকে নকল করার জন্যও কেউ কেউ তৎপর। আমাদের দরকার হচ্ছে ওই সব ওষুধ কোম্পানিকে বন্ধই করে দেওয়া, যারা কি না নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করে।’এ ব্যাপারে প্রায় একই রকম পর্যবেক্ষণ দেয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত এক বছরে অভিযান চালিয়ে যে ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়েছে, তার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে র্যাব বলছে, ভেজল, নকল ও অনুমোদনহীন ওষুধ বাজারে ১০ শতাংশের বেশি।র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘আমরা যেখানে অভিযান করেছি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রায় দোকানগুলোতেই যেখানে আমরা হাত দিয়েছি, কিছু না কিছু নকল ওষুধ পাচ্ছি। নকল বা অনুমোদনবিহীন অথবা ভেজাল ওষুধ বা নিষিদ্ধ ওষুধ পাচ্ছি। এতে করে মনে হচ্ছে, বেশির ভাগ দোকানেই কিন্তু এ জাতীয় ওষুধ বিদ্যমান। কেউ জ্ঞাতসারে এগুলো করছে, কেউ অজ্ঞাতসারে কিনে আবার রোগীদের কাছে বিক্রি করছে।’সারওয়ার আলম আরো বলেন, ‘আমরা দেখলাম যে প্যাথেডিন ইনজেকশন আমাদের একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে, সেই স্পর্শকাতর ইনজেকশন সেটাও কিন্তু নকল হচ্ছে।’
দোকানে ঢুকে যাচ্ছে ভেজাল ওষুধ
Share!