পাচার হওয়া অর্থ নিয়ে আমাদের আরও চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশেরও বেশি অর্থাৎ ৯০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয় বলে দাবি করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। আইসিসির সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রমুখ।মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়- অর্থ পাচার হয়ে যাওয়া। এ বিষয়ে শেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরে ৯০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যা জিডিপির ৬ শতাংশেরও বেশি। তবে বিশিষ্ট এই বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে আর বিস্তারিত আলোচনা করেননি। তিনি বলেন, এই পাচার হওয়া টাকা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা নানা সময় কথা বললেও এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। পাচার হওয়া এসব টাকা আমাদের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।প্রতি বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা থাকলেও অর্থনীতিতে এর কোন সুফল নেই। আইনি প্রক্রিয়ায় যদি আমরা এই পাচাররোধ করতে না পারি তাহলে তা আরও বাড়বে।সংলাপে বক্তারা জাতিসংঘ ঘোষিত ১৫ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৩০) টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে অর্থ যোগান দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন।দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশে মিরাকলের মতো অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শত প্রতিবন্ধকতা থাকলেও আমরা সহগ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করেছি। যা বহির্বিশ্বে অনেক প্রশংসা করেছে। শত বাধা থাকলেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।তিনি বলেন, বর্তমানে রিজার্ভ আছে ২৮ বিলিয়ন, কৃষি খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, সেবা খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশ। এর পাশাপাশি রফতানি আয়ও বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়।যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধার প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি খাতে ৭ শতাংশ এবং সরকারি খাতে ১৩ শতাংশে ট্রেড ইউনিয়ন আছে। অথচ বাংলাদেশে শতভাগ ট্রেড ইউনিয়ন চায় তারা। আমাদের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ১০ হাজার টাকা। আমাদের কর্মপরিবেশও ভালো। তবুও জিএসপি সুবিধা না পাওয়া দুঃখজনক।দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি গ্রামের মানুষ। একসময় গ্রামে রাস্তাঘাট ও কালভার্টও ছিল না। এখন অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। গ্রামগুলো নগরায়নে পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, মাতৃ-শিশু মৃত্যুহার ও গড় আয়ুতে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে। দ্রত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।এসডিজি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা সপ্তম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজি অন্তর্ভুক্ত করেছি। তাই সপ্তম বার্ষিক পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এসডিজি অর্জনে কোনো বাধা থাকবে না। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে বছরে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশের সমান। তবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, বছরে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশের সমান।মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতিতে কালো টাকা একটা বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বোঝা দিন দিন বেড়েই চলছে। পাচাররোধে গৃহীত পদক্ষেপ তেমন কাজে আসছে না। এ নিয়ে এনবিআর নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও তা তেমন কাজে আসছে না।তিনি আরও বলেন, পাচার হওয়া অর্থ নিয়ে আমরা নানা কথা বললেও এই টাকা ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন। মূলত পাচারকারীরা অনেক শক্তিশালী। পাচার প্রতিরোধে আইন আরও কঠিন করতে হবে। সীমান্তে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে।তিনি আরও বলেন, আমাদের যে, রিজার্ভ থেকে চুরি হয়েছে তা ফিরিয়ে আনাও অনেক কঠিন কাজ। এই টাকা ফিরিয়ে আনার চেয়ে ভবিষ্যতের যাতে আর এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত না হয় সেদিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে।
প্রতিবছর ৯০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে
Share!