আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়েছেন তামিম ইকবাল। কোমরের চোট যে ধরনের, তাতে পাঁচ দিনের টেস্টের ধকল নেওয়ায় ঝুঁকি আছে। তাই লাল বলে বাঁহাতি ওপেনারের ফেরার অনিচ্ছার কথা গোপন কিছু নয়।
মিরপুরে তিনি গিয়েছিলেন। সর্বশেষ তামিমকে মিরপুরে দেখা গিয়েছিল যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে হোম অব ক্রিকেটে ঘুরিয়ে দেখাতে। ক্রিকেট থেকে দীর্ঘ বিরতির কারণে শরীর বেশ ভারী। সেই মেদ ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব। অতীতে কঠোর অনুশীলনে ওজন কমিয়ে ঝরঝরে হয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের চিন্তা থেকেই নাকি জুলাই মাসে দুবাই গিয়েছিলেন ফিটনেস ট্রেইনারের সঙ্গে কাজ করতে। মাঝপথে মিশন অসমাপ্ত রেখে তামিমকে ফিরতে হয় অগ্রজ নাফিস ইকবালের অসুস্থতার কারণে। সেখানেই থেমে আছে তামিমের ফিটনেস ফিরে পাওয়ার লড়াই।
কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে গতকাল ফোন করেও তামিমকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি দুবাই গেছেন, শিগগিরই ফিরবেন। তবে ফিরেই ওজন কমাতে জিমে ঝাঁপিয়ে পড়বেন, এমন সম্ভাবনা নেই। যদিও বোর্ড সভাপতি হিসেবে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ফারুক আহমেদ ক্রিকেটার তামিম ইকবালকে মাঠে দেখতে চেয়েছিলেন। মাহমুদউল্লাহ বিশ্বাস করেন, ‘তামিমের পক্ষে আরো দু-তিন বছর খেলা সম্ভব।’ একই ধারণা দলের আরো অনেকের। কিন্তু তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজার ২৪৯ আন্তর্জাতিক রান করা তামিম ইকবাল যেন অন্য ভাবনায় ডুবে।
সেই ভাবনার প্রকাশ ঘটেছিল গত বছর। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তিনি তখন অধিনায়ক। সিরিজের মাঝপথে আচমকা সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সবিস্তার না বললেও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজের অবসর গ্রহণের পেছনের আসল কারণটি পরোক্ষে জানিয়েছিলেন তামিম। ড্রেসিংরুমে যথাযথ গুরুত্ব পাওয়ায়ই অবসর নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরেছিলেন, নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু আবার সেই ‘উপেক্ষা’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরিয়ে দেয় তামিম ইকবালকে।
শতভাগ ফিট না হওয়ায় তামিমকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হয়নি। বলা ভালো, তৎকালীন বোর্ড সভাপতির একটি পরামর্শ ‘উদ্ভট’ মনে হওয়ায় নিজেই জানিয়ে দেন বিশ্বকাপ দলে না রাখার বিষয়টি। ফিটনেস ইস্যুতে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানেরও আপত্তি ছিল। অথচ বিশ্বকাপের সময় জানা গেল, খোদ অধিনায়কেরই চোখে সমস্যা! সেটি তাঁর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছিল। দলের পরিণতিও হতাশাজনক।
তত দিনে তামিম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে চন্দিকা হাতুরাসিংহের অধীনে আর জাতীয় দলে খেলবেন না। প্রধান কোচও তামিমকে ফেরানোর কোনো চেষ্টা করেননি। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর একবারের জন্যও তামিমের খোঁজ নেননি হাতুরাসিংহে। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সময় বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল তামিমের। তখন নাজমুল নাকি টেস্টে ফেরার অনুরোধ করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনারকে। ওয়ানডের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি।
এরপর দিন গেছে, তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপটে ধুলো জমেছে। সেই ধুলো সরানোর ইচ্ছা সম্ভবত তাঁর নিজেরও নেই। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু জমকালো জার্নির শেষটা তবে কি অনাড়ম্বরেই ঘটে গেছে ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর?