কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এভাবে মায়ের কোল খালি হোক আমি চাই না। কারণ আমি তো বাবা-মা সব হারিয়েছি, আমি তো জানি হারানোর ব্যথা কত কষ্টের। আর সেই ব্যথা বুকে নিয়েই ফিরে এসেছি এই দেশের মানুষের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ২০০৮ সাল আর ২০২৪ এর বাংলাদেশ তো এক না। বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান তো উন্নত হয়েছে। আমাদের অর্থনীতি কত উপরে উঠে গিয়েছিল এবং এটা মনে হল, আর কিছুই না বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতি করে দেয়া। এটা বোধহয় এর (সহিংসতা) পেছনের ষড়যন্ত্র। সেটাই হচ্ছে সব থেকে দুঃখজনক।
তিনি বলেন, আজকে এতগুলো মানুষের জীবনের ক্ষতি হলে, এতগুলো পরিবারের ক্ষতি হল, এর দায়-দায়িত্ব কাদের? তাদের বিচার এই দেশের মানুষের করতে হবে। এর বিচার দেশবাসীর কাছে চাই। আহতদের চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা করবে সরকার।
দেশের উন্নয়নের নিজের ব্যক্তিগত কোনও চাওয়া-পাওয়া নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আমার তো কোনও চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি তো ছেলে-মেয়েদের জন্যও কিছু করিনি। শুধু তাদের লেখাপড়া… নিজেরাই চাকরি করে লেখাপড়া করেছে। আমি কতটুকুইবা তাদের জন্য করতে পেরেছি। কিন্তু আমি দেশের মানুষের জন্য করেছে। আজ অন্তত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের কাজের সংস্থান; সবই তো করে দিচ্ছিলাম। যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলাম, তখনই তাণ্ডব করে ঠিক যে জায়গাগুলো (প্রতিষ্ঠান) মানুষের সেবা করবে, সে জায়গাগুলোতে আঘাত করা হলো।
শিক্ষার্থীরা এখনও আন্দোলন না থামানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমস্ত দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তাদের আর সেই শাটডাউন শেষ হয় না, কী কারণে আমি বুঝি না। আমরা তো সবগুলো দাবিই মেনে নিয়েছি। একটা মানলে আরেকটা, আরেকটা মানলে আরও একটা! আর এর ফল আজকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সব একদিকে ছারখার, আর আজকে কত মানুষ জীবন হারালো! কতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে! কতগুলো মানুষ…।
তিনি বলেন, যেখানে দাবি করেছে, প্রত্যেকটা দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। মামলা তো তাদের না! আমার করা প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট বাতিল করে দেয়, সরকারের পক্ষ থেকেই তো আমরা আপিল করি। হাইকোর্টের সেই রায় স্থগিত করে দেওয়া হয়। তাহলে আন্দোলনটা কীসের জন্য ছিল! একেবারে শাটডাউন করে সবাইকে, তারপর মারা। যেসব ঘটনা ঘটেছে, যেভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর যারা মারা গেছে আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আর যারা এখন আহত, তাদের সকলের চিকিৎসা সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে।’ এসময় চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ধন্যবাদও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। আহতদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
নিটোর পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এই সময় প্রধানমন্ত্রী আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন।
সরকার প্রধানের সঙ্গে এই সময় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মহাখালীতে অবস্থিত সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্টরা এই সময় উপস্থিত ছিলেন। সরকার প্রধান একইসঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞও পরিদর্শন করেন।