তার মতে, ‘এই দুর্ঘটনার কারণ যান্ত্রিক হতে পারে, অন্তর্ঘাতও হতে পারে, এমনকি রাইসির রাজনৈতিক বৃত্তে থাকা কারোর হাতও থাকতে পারে। কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
তিনি মনে করেন, ‘ইরানের মানুষ চাইবেন, এই দুর্ঘটনা নিয়ে আগামী দিনে আরো তথ্য সামনে আসুক।
বর্তমান শাসকদের কাছে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখাই প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব পাবে। মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যে শপথ নিয়েছে, কোনো রকম বিঘ্ন ছাড়াই সরকার কাজ করে যাবে। মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা মানুষকে সেবা করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাবেন।
মোহাম্মদ মোখবারকে এখন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে।আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব সামলাবেন। নিয়মানুসারে ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে।
জার্মান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি টাইসের গবেষক হামিদরেজা আজিজি বলেছেন, ‘৬৯ বছর বয়সী মোখবার শিয়া ধর্মীয় নেতাদের আস্থাভাজন। তার সঙ্গে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সম্পর্কও খুব ভালো।
বাজোবান্দি আরো বলেছেন, ‘৫০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এটা অনুমান করাই যায় যে এর মধ্যে কোনো চমক থাকবে না।’
এখন ইরানে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ৫০ শতাংশ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া, প্রচুর মানুষ আর্থিক কষ্টের মধ্যে পড়েছে। ২০২৩ সালে সরকার ৮৫৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে। ২০১৫ সালের পর এত বেশি মৃত্যুদণ্ড কখনো কার্যকর হয়নি।
জোবান্দি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ও আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে মানুষের উৎসাহ কম হতে পারে।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘মানুষ এই শাসকদের বিশ্বাস করে না। আর শাসক পরিবর্তনের আশাও তাদের নেই। অনেক নাগরিক মনে করেন, ভোট হওয়ার আগেই তারা জানেন, কে জিতবে। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট হতেই পারেন।’
কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের বিশেষজ্ঞ করিম সাদজাদপোর মনে করেন, ‘রাইসির মৃত্যুর ফলে ইরানে রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের সংকট আসতে পারে। খুব কম মানুষই মনে করে, স্বাভাবিক দুর্ঘটনায় রাইসির মৃত্যু হয়েছে।’
আরেকটি বিতর্ক হতে পারে
রাইসির মৃত্যুর পর আরেকটি বিষয় সামনে আসতে পারে, তা হলো, খামেনির উত্তরাধিকারী কে হবেন?
ইরান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে দুজনের নাম নিয়ে আলোচনা হতো, তার মধ্যে একজন ছিলেন রাইসি এবং অন্যজন হলেন ৫৫ বছর বয়সী মোজতাবা, যিনি পর্দার পেছন থেকে এত দিন প্রভাব বিস্তার করেছেন।
অনেকে মনে করেন, মোজতাবা সর্বোচ্চ নেতা হলে ইরানের মানুষের একটা বড় অংশ খুশি হবেন না। সাজাদপোর লিখেছেন, ‘মোজতাবা খামেনি সর্বোচ্চ নেতা হলে বিক্ষোভ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মোজতাবা পুরোপুরি রেভল্যুশনারি গার্ডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন।’
কিন্তু বাজোবান্দি বিশ্বাস করেন, ‘নতুন করে ইরানে কোনো গণআন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর অত্যন্ত কড়া হাতে বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে। বিরোধীরা পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়েছেন।’
তিনি মনে করেন, ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের আমলেও কোনো দিশা পরিবর্তন হবে না। তিনিও খামেনির নির্দেশ মেনে চলবেন। পরবর্তী প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে।’