সাধারণত ঈদের আগে আর রমজান মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ে। তবে হুন্ডির চেয়ে ব্যাংকে ডলারের দর কমে যাওয়ায় ঈদের আগেও কমে গেছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে মার্চ মাসে- ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। যেখানে এর আগের মাসের একই সময়ে এসেছিল ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। অর্থাৎ আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার বা ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বছরের সবচেয়ে ছোট মাস ফেব্রুয়ারি। সাধারণত ২৮ দিনেই মাসটি শেষ হয়। তবে চলতি বছর অধিবর্ষ হওয়ায় ২৯ দিনে শেষ হয় মাসটি। আর মার্চ মাস শেষ হয় ৩১ দিনে। ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে দুদিন বেশি থাকলেও রেমিট্যান্স বাড়েনি। বরং আগের মাসের তুলনায় বেশ কিছুটা কমে গেছে। শুধু তাই নয়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২৩ সালের মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলার।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে ডলারের দর অনেক কমে যাওয়া এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের অস্বাভাবিক রেমিট্যান্স কমায় সার্বিকভাবে রেমিট্যান্স কমে গেছে।
জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা পাচ্ছিলেন প্রবাসীরা। তবে হঠাৎ কমে গত সপ্তাহে তা ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৩ টাকায় নেমেছিল। অথচ হুন্ডিতে গতকালও ১২০ থেকে ১২১ টাকায় রেমিট্যান্স কেনাবেচা করতে দেখা গেছে। এতদিন যে দর মিলছিল হঠাৎ অনেক কমে যাওয়া এবং হুন্ডিতে বেশি পাওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডিতেই বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এ ছাড়া গত মাসে হঠাৎ ন্যাশনাল ব্যাংকে অস্বাভাবিক হারে রেমিট্যান্স বেড়েছিল। সাধারণত সমস্যাগ্রস্ত এ ব্যাংকটির মাধ্যমে মাসে ২০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। তবে ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৩১৩ মিলিয়ন ডলার। এই রেমিট্যান্সের বেশিরভাগ এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এর প্রভাবে ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রেমিট্যান্সও অনেক বেড়ে যায়।
ঈদের আগে প্রবাসী আয় কমার কারণ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের আগে সবসময়ই প্রবাসীরা বেশি পরিমাণে অর্থ পাঠান, যাতে পরিবার-পরিজনরা ভালোভাবে ঈদ করতে পারে। এখনো ঈদের আগে বেশ কয়েকটি কর্মদিবস রয়েছে। ধারণা করছি এই সময়ে রেমিট্যান্স অনেক বেশি বাড়বে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি মার্চ মাসে ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫২ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১০ কোটি ডলার, আর ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর সমাপ্ত ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৯৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।