বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশেই অনাহারে অপুষ্টিতে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে শিশু ও মানুষ। এরই মধ্যে আবার জাতিসংঘ জানিয়েছে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন ১০০ কোটি টনের বেশি খাবার নষ্ট হচ্ছে। বেশির ভাগ খাবার অপচয় হয়েছে বাসাবাড়িতে। অন্যদিকে খাদ্যের অভাবে প্রতি রাতে বিশ্বের নানা প্রান্তে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমুতে যান প্রায় ৮০ কোটি মানুষ।
বুধবার (২৭ মার্চ) জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট-২০২৪ এ তথ্য প্রকাশ করেছে। খাবার অপচয়ের এ ঘটনাকে ‘বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ যখন না খেয়ে আছে, তখন লাখ কোটি ডলার মূল্যের খাবার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা হচ্ছে। ২০২২ সালে যত খাবার নষ্ট হয়েছে, তার ২৮ শতাংশ নষ্ট হয়েছে রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন ও হোটেলের মতো খাদ্য পরিষেবা ব্যবস্থাগুলোতে। কসাই ও মুদিদোকানে নষ্ট হয়েছে ১২ শতাংশ খাবার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে গৃহস্থালি বা পরিবারগুলো ৬০ কোটি মেট্রিক টনের বেশি খাদ্য নষ্ট করেছে। যা মোট অপচয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ। এর পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লাখ টন। গড় হিসেবে একজন ব্যক্তি প্রতি বছরে ৭৯ কিলোগ্রাম খাবার অপচয় করে। কেবল উন্নত বিশ্বে নয়, উচ্চ এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও প্রতি বছর জনপ্রতি ৭ কিলোগ্রাম খাবারের অপচয় হয়।
বাড়িঘরগুলোতে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়, তা এক বছরে বিশ্বে মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক পঞ্চমাংশ। জাতিসংঘের বৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষাবিষয়ক প্রকল্প ইউনাইটেড নেশনস এনভায়র্নমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) নির্বাহী পরিচালক ইঙ্গের অ্যান্ডারসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, খাদ্যের এই অপচয়ের কারণে প্রতিদিন বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে থাকেন।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্যের অপচয় কেবল মানুষের আদর্শগত ব্যর্থতা নয়, বরং পরিবেশের জন্যও হুমকি। ফেলে দেয়া খাবার থেকে বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। আমাদের হাতে থাকা তথ্য বলছে, ফেলে দেওয়া খাবার থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়, বিশ্বে প্রতিদিন বিমান চলাচলজনিত কারণে নির্গত হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাসের তুলনায় তা পাঁচগুণ বেশি।
প্রতিবেদনটির তথ্য সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণের কাজে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে র্যাপ নামের একটি অলাভজনক গবেষণা সংস্থা। ইউএনইপির কর্মকর্তা ক্লেমেন্টেন ও’কনর এএফপিকে বলেন, আমরা এখানে শুধু বাড়িঘরগুলোর তথ্য দিয়েছি। এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে জরিপের ভিত্তিতে। এ ছাড়া রেস্তোরাঁয় খাদ্য অপচয়ের তথ্য এখানে দেওয়া হয়নি। তাই আমাদের বিশ্বাস, বাড়িঘর ও রেস্তোরাঁয় অপচয় হওয়া খাদ্য প্রকৃত আরও অনেক, অনেক বেশি।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে খাবারের অপচয় নিয়ে জাতিসংঘের সংকলিত দ্বিতীয় প্রতিবেদন এটি।