Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

অর্থ পাচারকারীদের ছাড় দেয়া হবে না: সিআইডি প্রধান

যারা প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে টাকা পাচার করছে আমরা তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না উল্লেখ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছেন, ‘যারা প্রতারণা করে গাড়ি-বাড়ি করছেন, বিদেশে অর্থ পাচার করছেন তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা হবে। একই সঙ্গে তাদের সব সম্পদ এবং ব্যাংকে রাখা অর্থ ফ্রিজ করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু ঘটনায় এরকম অর্থ ফ্রিজ করেছি। আরও কিছুর কাজ চলছে।’

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি যারা প্রতারক তারা প্রতারণার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর সেই টাকা আর রাখেন না। এমনটা অনেকেই করছেন। সম্প্রতি লাগেজ ভর্তি ডলার পাঠানোর কথা বলে প্রায় ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও সেই টাকা নিজের কাছে রাখেনি চক্রের মূল হোতা। চক্রটি মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত। সেজন্য ভার্চুয়াল টোপ থেকে সাবধান হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সিআইডি প্রধান বলেন, ‘সম্প্রতি যেকোনো ব্যক্তিকে ফোন করে অথবা ফেসবুকে বিনা বিনিয়োগে অর্থ কামানো যায় বলে প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। তারা আপনাকে ফোন করে বলবে ৩০০ টাকা বিনিয়োগ করলে ৬০০ টাকা পাবেন, বাসায় বসে বিনা পুঁজিতে লাভবান হবেন, নানা কথা বলে আকৃষ্ট করছে। তাদের ফাঁদে পা দিলেই তারা একটা লিংক পাঠায়। তাতে ক্লিক করলে তারা আপনাকে টোপ হিসেবে কিছু টাকা দিচ্ছে এরপর সেই লিংক বন্ধ করে দিচ্ছে। পরে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে চক্রটি। চক্রটির সঙ্গে বিদেশি একটি চক্র জড়িত। আমরা চক্রটি নিয়ে কাজ করছি।’

সুমন আল রেজা (৪০), থাকেন বাংলাদেশে। তার সঙ্গে একটি প্রতারক চক্রের ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের একজন সদস্য নিজেকে ফ্লোরিডা সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলেন, ফ্লোরিডা সিটি ব্যাংকের একজন ক্লাইন্টের ৬০ লাখ ডলার ডিপোজিট রয়েছে। সেই অর্থ ডলারে আনতে তাকে খরচ দিতে হবে। যার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি টাকা।

রেজা প্রলোভনে পড়ে তার বোন ও দুলাভাইয়ের কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা নেন। এরপর সেই টাকা পাঠান প্রতারক চক্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এরপর সেই টাকা তুলে নেয় চক্রটি। এভাবে বিভিন্নজনকে ডলার পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছে চক্রটি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। চক্রটির মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির সাইবার ইউনিট। গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন- সোহেল আহমেদ অপু (২৮), ইব্রাহিম (৩০) ও আকাশ (২৪)।

তাদের মধ্যে মূলহোতা তপুকে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি দুজনকে গত মাসে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তপুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তপু মিরপুরের আব্দুল মান্নানের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, ‘সুমন আল রেজার সঙ্গে প্রতারক চক্রের ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের এক সদস্য নিজেকে ফ্লোরিডা সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন ফ্লোরিডা সিটি ব্যাংকের একজন ক্লাইন্টের ৬০ লাখ ডলার ডিপোজিট রয়েছে। ক্লায়েন্ট হাইতিতে থাকেন। সেই ব্যক্তি ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর মারা গেছেন। কিন্তু তার কোনো ওয়ারিশ নেই। এরপর প্রতারক সুমন আল রেজাকে ক্লায়েন্টের ওয়ারিশ হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করেন। তার ডিপোজিট করা টাকা উত্তোলনের পর দুজনে সমানভাগে ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাবও দেন তাকে। এরপর প্রতারক চক্রটি সুমন আল রেজার কাছে লাগেজ ভর্তি ডলার কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানোর চার্জ বাবদ ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা দাবি করে।’

তিনি আরও জানান, ‘সেই টাকা দেওয়ার পর প্রতারক চক্রটি ফেডারেল ট্যাক্স হিসাবে ৫৫ হাজার ডলার (৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা) দাবি করে। এবার রেজা লাগেজ ভর্তি ডলারের প্রলোভনে পড়ে যান। সেই প্রতারক চক্রের কথামতো ফেডারেল ট্যাক্স হিসাবে ৫৫ হাজার ডলার (৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা) গোল্ডেন লজিস্টিক এন্টারপ্রাইজের ডাচ বাংলা ব্যাংক ঢাকার মিরপুর-১০ শাখায় পাঠিয়ে দেন। রেজা অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখতে পান তার অ্যাকাউন্টে কোনো ডলারই ঢোকেনি। তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় গত বছরে ১৭ ডিসেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় তপুসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top