Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

নিত্যপণ্যের দাম চাঁদাবাজির কারণেই বেড়েছে : র‍্যাব

পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে এবং বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে এ চাঁদাবাজি করা হয় বলে জানায় র‍্যাব। এছাড়া আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে, চলমান মজুতদারি বন্ধে ও পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজি বন্ধে মাঠে নেমেছে তারা।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংস্থার মুখপাত্র খন্দকার আল-মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

ঢাকায় অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা তোলা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা দিয়ে মধ্যরাতে যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করে, তখন চাঁদা উত্তোলন শুরু হয়। একটি গ্রুপ চাঁদা উত্তোলন করে কথিত ইজারাদারদের কাছে জমা দেয়। তারা সিন্ডিকেটের মধ্যে টাকা ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়। চাঁদা উত্তোলনকারীরা প্রতি রাতে মজুরি হিসেবে ৬০০-৭০০ টাকা পান। প্রতিটি স্পট থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।’

এই র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা তথাকথিত ইজারাদারদের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতি রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপর অবস্থান নেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের সময় তারা লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে থাকেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা চাঁদা আদায়ের রসিদও দিয়ে থাকেন। চালকেরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে গাড়ি ভাঙচুর, চালক-হেলপারকে মারধরসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন থেকে ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকেন। কখনো শ্রমিক সংগঠন, কখনো কল্যাণ সমিতি, কখনো সিটি করপোরেশন, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে এই চাঁদা আদায় করা হয়।’

খন্দকার আল-মঈন বলেন, ‘সম্প্রতি অযৌক্তিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখ ও পাইকারি বাজার এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের সময় হাতেনাতে ৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার ভোররাতে একযোগে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব।’

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, রাজধানীর কাজলা, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, ইত্তেফাক মোড়, টিটিপাড়া, বাবুবাজার, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়, কারওয়ান বাজার ও গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. বাবলু, মো. জাবেদ, মো. আরিফ, বিল্লাল হোসেন, মো. আলী হোসেন, মো. রাকিব হাসান, মো. ফালান মিয়া, মো. সাকিব আলী, আবুল হোসেন ও মো. রাজাসহ ৬৩ জন।

তাদের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, একটি লেজার রশ্মির লাইট, সিটি করপোরেশনসহ ছয়টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যাকেট, দুটি অন্যান্য লাইট, চারটি আইডি কার্ড, ৪১টি মোবাইল ফোন এবং বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদায়ের রশিদ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

র‍্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ‘সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে যারা বৃদ্ধিতে কারসাজি করছেন, মজুত করে দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করবেন, তাদের পরিচয় যাই হোক শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও অভিযান পরিচালনার জন্য প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশ দিয়েছে র‍্যাব।’

তিনি বলেন, ‘এলিট ফোর্স র‍্যাব সবসময় এ ধরনের জনসম্পৃক্ত ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করে থাকে। আজকে থেকে আমরা সবজিসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে ও মজুতদারি বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘চাঁদাবাজির কারণে অনিয়ন্ত্রিত ও অযৌক্তিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। আমরা আমাদের প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশনা হয়েছে, গোয়েন্দা নজরদারি পরিচালনা করার জন্য। যারা নামে বেনামে সিন্ডিকেট করে চাঁদাবাজি করছে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, নিত্যপণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, এই ধরনের মজুতদার ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে যারা কারসাজি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। সামনে রমজান। রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকে সেজন্য র‍্যাবের প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজ মজুতদার ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে যারা কারসাজি করছেন তাদের শনাক্ত করার জন্য।’

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যারা ইচ্ছাকৃত, কারসাজি করে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করবেন, এখন করছেন তাদের শনাক্ত করে কঠোর ও আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সে যেই হোক, তারা যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও হয়, সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে ছাড় দেওয়া হবে না, কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। নিত্যপণ্যের সরকারি মূল্যের বেশি দামে কেউ যদি পণ্য বিক্রি করেন বা মজুত করে অন্যত্র বিক্রির চেষ্টা করছেন তাদের শনাক্ত করছি। মোবাইল কোর্ট তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top