নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, মাঠ পর্যায়ের তথ্য নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বদলির কারণে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি বলেন, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া স্বতন্ত্রসহ সব প্রার্থীর নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আমাদের নিবন্ধিত যে ৪৪টি রাজনৈতিক দল আছে, তার মধ্যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জেডি পিপলস নামে একটি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, যেটি আমাদের নিবন্ধিত দল নয়। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে দেখা গেছে ২ হাজার ৭১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেননি এবং একটি স্থানে দুইবার জমার দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, আওয়ামী লীগ থেকে ৩০৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।’
যে ৫টি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেননি, সেখানে কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘সেটা বাছাইয়ের সময় দেখা যাবে।’
ওসি ও ইউএনওদের বদলি সরকার চেয়েছে নাকি আপনারা চেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশন চেয়েছে। আমাদের কমিশনাররা গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং অঞ্চল পর্যায়ে সফর করেছেন, তাদের যে ফাইন্ডিংস, তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন বসে গত ৩০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন অনুভব করেছে, এ বদলি দরকার। সব তথ্য তো ওপেনলি বলা হয় না। নির্বাচন কমিশনাররা মাঠ পর্যায় থেকে যেসব তথ্য পেয়েছেন, বিভিন্ন প্রার্থী কিংবা বিভিন্ন কোয়াটার থেকে যে তথ্য এসেছে, তার ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত।’
কোনো এক নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, ‘বড় আকারে রদ বদল করা হলে পুলিশ-প্রশাসনে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে, এর দায়ভার ইসি কেন নেবে? আর একটা কথা বলেছিলেন, ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ১০০ কোটি টাকা কেন ব্যয় হবে, তাহলে ওই কমিশনারের কাছে জানতে চাইতে হবে। কমিশনে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমি সেটা বলতে পারব না।’
ডিসি-এসপিদের বদলির কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই। পরবর্তীতে যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয়, তখন বলতে পারব। যদি নির্বাচন কমিশন বসে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে এটা হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
রদবদলের ক্ষেত্রে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি নেই। একজন কর্মচারী যে উপজেলা বা জেলায় দায়িত্ব পালন করুক না কেন, তিনি সুষ্ঠুভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে মেসেজ দিয়েছি। এটা পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের ও আমাদের রিটার্নিং অফিসারদের বলেছি। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এসেছিলেন, সব বিষয়ে তাদের মেসেজ দেওয়া হয়েছে। কেউ যেন নিরাপত্তার ঘাটতিতে না ভোগে। এরপরও যদি কারও গাফিলতিতে কিছু হয়, তার বিরুদ্ধে ইসি খুব স্ট্রং ব্যবস্থা নেবে।’
সব প্রার্থীদের বডিগার্ড দেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো সম্ভব হবে না। এতো বডিগার্ড দেওয়া যাবে না। তবে, নিরাপত্তার দায়িত্ব তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা যেন তা নিশ্চিত করতে পারে, সেটাই আমাদের কাম্য।’
সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘যদি কমিশন মনে করে, সেটার প্রয়োজনীয়তা আছে তাহলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এ মুহূর্তে এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই।’
ইসির ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন হবে। তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর।