জামার হাতাটা ভাঁজ করতেই আহমেদ কারগির ডান হাতের ট্যাটুটা বেরিয়ে পড়ল। এটা যে তুরস্কের পতাকা, তা নিজেই জানিয়ে দিলেন তিনি। বললেন, ‘এটা আমার শিকড়ের সঙ্গে নিজেকে আরও ঘনিষ্ঠ ভাবতে সাহায্য করে।’
৪০ বছর বয়সী কারগি তুর্কি বংশোদ্ভূত। কিন্তু তিনি আজ মোটরসাইকেলে চেপে ব্রুকলিনের শান্ত রাস্তায় আওয়াজ তুলে যাঁর উদ্দেশে ছুট দিলেন, তিনি একজন ইরানি। নাম আলী (৪৮)। ইরানি এই মুসলমান চাকরি হারিয়ে বিষণ্ন ছিলেন। এরপর এক রাতে ঘুমের মধ্যেই মারা গেছেন। কিন্তু এখানে দাফন করানোর সামর্থ্য নেই তাঁর রুশ স্ত্রী সেভতলানার। তাই মরদেহ চলে যাবে ইরানে। তার আগে ইসলামি রীতি মেনে স্বামীর লাশের গোসলসহ শেষকৃত্য করাতে চান তিনি।
সে লক্ষ্যেই আলীর মরদেহ নিউইয়র্কের ডেকালব অ্যাভিনিউয়ের পিরো ফিউনেরাল হোমে আনা। এখানে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের শেষকৃত্যের জন্য পৃথক তিনটি বিভাগ রয়েছে। আহমেদ কারগি মুসলিম বিভাগের প্রেসিডেন্ট।
কারগির মতে, যুক্তরাষ্ট্রে শেষকৃত্য নিয়ে রীতিমতো বাণিজ্য হয়; থাকে নানা আয়োজন। এখানে প্রথাগত একটি শেষকৃত্যে ৬ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু ইসলামে শেষকৃত্যের জন্য এত খরচকে অপচয় হিসেবে দেখা হয়। আর এখানে সবকিছুই করা হয় মৃত ব্যক্তির জন্য। তাকে চিরনিদ্রার স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে শুইয়ে দেওয়াটাই বড় কথা।
কিন্তু নিউইয়র্কের মুসলমানদের জন্য মাটির নিচে চিরনিদ্রার জায়গা পাওয়াটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এখানে ৬ থেকে ১০ লাখ মুসলিমের বাস হলেও তাদের জন্য কোনো কবরস্থান নেই। নিউজার্সির স্টেট মেমোরিয়াল পার্ক সেমিট্রিসহ দু-একটি সমাধিক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য অল্পস্বল্প যে জায়গা আছে, সেখানে লাশ দাফনে ৬ হাজার থেকে ১৪ হাজার ডলার গুনতে হয়। তাই বেশির ভাগ মুসলিমকেই খুঁজতে হয় বিকল্প উপায়।
নিউইয়র্কে ইসলামি শেষকৃত্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ফিলিস্তিনি আমেরিকান নাগরিক নুরুদ্দিন আবু ইব্রাহিম বলেন, মৃত্যু অনিবার্য বাস্তবতা। কিন্তু মরদেহ দাফন করার বিষয়টি কারও জন্য এতটা জটিল, এতটা ব্যয়বহুল হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে মরার সামর্থ্য নেই। আমরা যাতে নিজস্ব একটি কবরস্থান পাই, সে জন্য নিউইয়র্কের মুসলিম সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসা উচিত।’
কবরের এত দাম!
Share!