দেশে নিত্যপণ্য পেঁয়াজের যে চাহিদা এর একটি বড় অংশের যোগান ভারত থেকে আমদানির ওপর নির্ভর করে। প্রতিবেশী দেশটি হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যটির বাজার। ভারতের সিদ্ধান্ত শোনার সঙ্গে সঙ্গেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। অথচ নতুন দামের পেঁয়াজ এখনও বাজারে এসে সারেনি। এমনকি ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে বেড়েছে দেশীয় পেঁয়াজের দামও।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বাজারে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। এই দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এদিকে বেড়েছে দেশীয় পেঁয়াজের দামও। পাবনা ও ফরিদপুরে উৎপন্ন হওয়া পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে পেঁয়াজের যোগানও কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জেও হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এক দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৮ থেকে ২২ টাকা। আর খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২৫ টাকার বেশি। গতকাল সোমবার রাজধানীর বাজারে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। এই দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হাবিব হাসান বলেন, ভারতের শুল্ক আরোপের পর থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এখন পেঁয়াজের সংকটও তৈরি হচ্ছে। অনেক আড়তে পেঁয়াজ নেই। এর ফলে দাম বাড়ছে। পেঁয়াজের দাম আগামী কয়েক দিনে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসেন মাহমুদ আলী নামে এক বেসরকারি চাকুরে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারত দুই দিন আগে শুল্ক আরোপ করেছে শুনেছি। কিন্তু সেই পেঁয়াজ তো এখনও ঢাকার বাজারে আসেনি। অথচ দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা সিন্ডিকেটের কাজ। সরকারের উচিত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
এদিকে অস্থির হয়ে ওঠা পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, হুট করে যাতে দাম না বাড়াতে পারে ব্যবসায়ীরা সেজন্য কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাকিদের ব্রিফিংকালে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে পেঁয়াজের বাজার কীভাবে সামলাবো সেটা মোকাবিলা করাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু ভারত কোনো ধরনের প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়েই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা দুঃখজনক। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের উচিত সুযোগ দেয়া।
সম্প্রতি ভারত সফর করে আসা ক্ষমতাসীন দলের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ভারত পেঁয়াজে রপ্তানি শুল্ক বাড়ানোর কারণে বাংলাদেশেকে অনেক ভুগতে হয়। সম্প্রতি ভারত সফরে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীকে এমনটা না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তারা গমের ক্ষেত্রে আর এমন করবে না বলে আশ্বস্ত করেছিল। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে তারা সহযোগিতা করবে কি না জানি না।
পেঁয়াজের সংকট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বড় সমস্যা হলো পেঁয়াজ গুদামে রাখা যায় না, পচে যায়। এটা একটা সমস্যা। চলতি বছরে আড়াই লাখ টন পেঁয়াজ কম উৎপাদন হয়েছে। গতবার দাম না পাওয়াতে চাষিরা পেঁয়াজ উৎপাদন কম করেছে।