এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালের শুরু আর কিছু সময় পরই। বাংলাদেশ বনাম ভারত। কিন্তু গুটিকয়েক সৌভাগ্যবান পেয়েছেন সোনার হরিণ ‘টিকিট’। তাঁদের আনন্দটা সবার থেকে আলাদা। তাঁরাই শুধু মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখবেন। আর বাকিরা নিঃসন্দেহে থাকবে টেলিভিশন সেটের সামনে। অবশ্য একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে নগরজুড়ে। মাঠের উত্তেজনা বাইরে পেতে বিভিন্ন স্থানে বড়পর্দায় খেলা দেখারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্টেডিয়ামে বসে টাইগারদের খেলা দেখার আগ্রহ যাঁদের ছিল, তাঁদের প্রায় সবারই সেই আগ্রহে ভাটা পড়েছে অনেক আগেই। কিন্তু সবাই যে একই পথের পথিক না, অনেকে যে এখনো হাল ছাড়েননি, তারই প্রমাণ পাওয়া গেল বিকেলে স্টেডিয়াম এলাকায়। অন্তত ছয়জনকে পাওয়া গেল যাঁরা এসেছেন ‘ব্ল্যাকে’ টিকিট পাওয়া যায় কি না, সেটা দেখতে। বয়সে সবাই তরুণ। ‘এ’ লেভেলের ছাত্র যেমন আছেন তেমনি আছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও। সকালে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের কাছেও গিয়েছিলেন তাঁরা। আলাপকালে সামিউল বললেন, ‘এত বড় লাইনে দাঁড়ানোর সাহস পাইনি। তা ছাড়া টিকিট পাব, এমন নিশ্চয়তাও নেই।’ সামিউলের ধারণা, শেষ বিকেলে টিকিট পাওয়া যাবে। তবে দাম বেশি পড়বে।
কেলে টিকিট পাওয়া দর্শক আর টিকিট না পাওয়া—দুই পক্ষেরই প্রায় সমান আনাগোনা চোখে পড়ে মিরপুর স্টেডিয়ামের আশপাশে। চেহারা আর পোশাক দেখেই বোঝা যায় কারা টিকিট পেয়েছেন আর কারা পাননি। টিকিট পাওয়া দর্শকরাই যেন একটি ‘দেখার বস্তু’তে পরিণত হয়েছিলেন। বেশ খানিকটা হেঁটে এসে স্টেডিয়ামের গেটে দাঁড়ানো দর্শকদের মধ্যে ক্লান্তির লেশমাত্র ছিল না। ‘আমরাই কিছু একটা করছি’ এমন ভাবভঙ্গি তাঁদের চলনে-বলনে। গায়ে লাল-সবুজ জার্সি, হাতে ছোট-বড় নানা আকারের পতাকা। অনেকের হাতেই ছিল বিভিন্ন আকারের খেলনা—রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সবাই যে জার্সি পরে এসেছেন, তা নয়। তবে পোশাকে লাশ-সবুজের আধিক্যই বেশি ছিল। কেউ কেউ এসেছেন বাঘের সাজে। গালে পতাকাও এঁকেছেন অনেকে।
খেলা দেখতে ছোট ছোট দলে এসেছেন বেশির ভাগ দর্শক। একই পরিবারের অনেক সদস্য মিলেও এসেছেন। সব বয়সের দর্শক দেখা গেলেও তারুণ্যেরই আধিক্য।
বনানী ডিওএইচএস থেকে একই পরিবারের নয়জন এসেছেন খেলা দেখতে। পেশায় ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলামের সঙ্গে এসেছে তাঁর স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ, মেয়ে, জামাতা ও তিন নাতি-নাতনি। আতিকুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ভালো খেলছে। ছেলেরা এখন জয়ের জন্য খেলে, তাদের “বডি ল্যাঙ্গুয়েজ” বলে তারা জিতবে। আর তারা জিতবে মানে আমরা জিতব, বাংলাদেশ জিতবে। এমন একটা ক্ষণের সামনে আমরা। এ কারণে উপস্থিত না থেকে পারা যায় না। তাই সবাইকে নিয়ে চলে আসলাম।’ তবে তিনি বলেন, ‘হারুক বা জিতুক আমাদের সমর্থনে কোনো ভাটা কখনোই পড়বে না।’বাদ্য-বাজনা নিয়েও হাজির হয়েছেন দর্শকেরা। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চার-ছক্কা ও প্রতিদ্বন্দ্বী দল ভারতের উইকেট পতনের সময় বাজবে এই বাজনা। অবশ্য শুধু বাংলাদেশের দর্শকেরাই মাঠে ঢুকছেন, তা নয়। ভারতীয় দর্শকেরাও আছেন। নীল রঙের জার্সি ছিল তাঁদের পরনে। মাঠের বাইরে বাংলাদেশের সমর্থক দর্শকদের আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে তাঁরাও অংশ নিয়েছেন। ভিন্ন দলের সমর্থক হলেও দুই পক্ষই জমজমাট ক্রিকেট উপভোগ করতে এসেছে মিরপুর মাঠে।