Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

সিরিজ জয় বাংলাদেশের

বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে বরাবরই বাড়তি সুবিধা পায় পেসাররা। কারণ ভেজা কন্ডিশনে বাড়তি পেইস আর সুইং ব্যাটারদের জন্য খেলা বেশ কঠিন কাজ। তবে আজ চট্টগ্রামে এসব ভুল প্রমাণ করলেন সাকিব। এই বাঁহাতি স্পিনার একাই ধসিয়ে দিলেন আইরিশদের। তার স্পিন বিষে নীল হয়েছে স্টার্লিংয়ের দল। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৭৭ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।

বুধবার (২৯ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১৭ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৮৩ রান এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। জবাবে সাকিবের ঘূর্ণি জালে আটকে গেছে আইরিশরা। বাংলাদেশ অধিনায়কের ৫ উইকেটের দিনে নির্ধারিত ১৭ ওভার ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান তোলে আয়ারল্যান্ড। সাকিব ২২ রানে শিকার করেছেন ৫ উইকেট।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরেছেন পল স্টার্লিং। অফ স্টাম্পের বাইরে তাসকিনের করা গুড লেন্থের বল ডিফেন্স করতে গিয়ে বলের লাইনে ব্যাট রাখতে পারেননি। বলে সামান্য সুইং থাকায় বল তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে চায় উইকেটের পেছনে, সেখানে ডানদিকে লাফিয়ে পড়ে বল গ্লাভসবন্দি করেছেন লিটন। তাতে গোল্ডেন ডাক খেয়েছেন এই অভিজ্ঞ ওপেনার।

পরের ওভারে আক্রমণে এসে আঘাত হেনেছেন সাকিবও। এই স্পিনারের প্রথম বলটি ছিল লেন্থ ডেলিভারী। সেখানে সুইপ করতে গিয়ে রনি তালুকদারের হাতে ধরা পড়েন লরকান টাকার। সাজঘরে ফেরার আগে ৫ বল খেলে ৬ রান করেন টপ অর্ডার ব্যাটার।

প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেট হারালেও তৃতীয় ওভারে নাসুমকে পেয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন হ্যারি ট্যাক্টর। এই স্পিনারের প্রথম ওভার থেকে দুই ছক্কায় সংগ্রহ করেন ১৪ রান। তবে পরের ওভারে আক্রমণে এসে আবারও প্রথম বলে উইকেট তুলে নেন সাকিব। এবার তার আর্ম বলে পুরোপুরি পরাস্ত রস অ্যাডায়ার। বল তার ব্যাট-প্যাড ফাঁকি দিয়ে সরাসরি আঘাত হানে স্টাম্পে। সাজঘরের ফেরার আগে ৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।

উইকেট দিয়ে শুরু করা নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষটাও উইকেট দিয়ে করেছেন সাকিব। তার শেষ বলে ফ্লাইট দিয়েছিলেন। আর তাতে সাড়ে দিয়ে শট খেলতে যান গ্যারেথ ডেলানি। ব্যাটে-বলে টাইমিং না হলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ৬ রান করা এই ব্যাটার।

নিজের প্রথম দুই ওভারে তিন উইকেট পাওয়ার পর নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাত হেনেছেন সাকিব। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলটি ব্যাটে খেলতে পারেননি ডকরেল, সরাসরি তার প্যাডে আঘাত হানে। তাতে আবেদন করলেও সাড়া দেননি আম্পায়ার। পরে রিভিউ নেন সাকিব। ফলে আউট দিতে বাধ্য হন আম্পায়ার।

একই ওভারের শেষ বলে সাকিবের আর্ম ডেলিভারীতে বোল্ড হয়েছেন ট্যাক্টর। এই ব্যাটারকে ২২ রানে ফিরিয়ে ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন সাকিব। এটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফাইফার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর রেকর্ডও নিজের করেছেন সাকিব।

৪৩ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ক্যাম্পার এবং মার্ক অ্যাডায়ারের ব্যাটে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করে আইরিশরা। তবে ক্যাম্পার ৫০ রানের বেশি করতে পারেননি। আর লেজের সারির ব্যাটাররা চেষ্টা করলেও সেটা কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে। হার এড়াতে পারেনি আইরিশরা।

এর আগে দুই দফা বৃষ্টির পর ম্যচ শুরু হলেও প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস এবং রনি তালুকদার। তাদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩ ওভার ৩ বল খেলেই দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে দল।

বিশেষ করে লিটন এদিন আইরিশ পেসারদের রীতিমতো কচু কাটা করছেন। ১৮ বলে স্পর্শ করেছেন ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম। মোহাম্মদ আশরাফুলের ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন ইতিহাস গড়েছেন এদিন এই উইকেটকিপার ব্যাটার।

হাফ সেঞ্চুরির পর আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন লিটন। অপর প্রান্তে রনিও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। সবমিলিয়ে ৬ ওভার ১ বলে দলীয় শতক পূর্ণ করে টাইগাররা। এরপর তারা ওপেনিং জুটিতে রেকর্ড গড়েছেন। নাইম শেখ এবং সৌম্য সরকারের ১০২ রানের জুটিকে ছাড়িয়ে যান লিটন-রনি।

৪৪ রান করে রনি বিদায় নিলে ভাঙ্গে ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা রনি শেষ পর্যন্ত সাজঘরে ফিরেছেন হাঁফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। এই ওপেনারের বিদায় নিলেও একটুও কমেনি রানের গতি। উইকেটে এসে প্রথম বলেই চার মেরে রানে খাতা খুলেন সাকিব। এর ফলে ১০ ওভার শেষে ১ উইকেটে ১৩০ রান তুলে বাংলাদেশ।

লিটন এদিন শুধু দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডই গড়েননি, ছাড়িয়ে গেছেন নিজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসকেও। টি-টোয়েন্টিতে এতদিন তার সেরা ইনিংসটি ছিল ৭৩ রানের। আজ সেটিকে ছাড়িয়ে গেছেন। তবে ৮৩ রানের বেশি করতে পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ১২তম ওভারের শেষ বলে বেন হোয়াইটের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েছেন তিনি। তার ৪১ বলের ইনিংসে ১০টি চারের পাশাপাশি ৩টি ছক্কার মার ছিল।

লিটনের বিদায়ের প্রভাব পড়ে রান রেটের ওপর। তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতে শট খেলতে কিছুটা হলেও ভোগেছেন সাকিব। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণাত্মক হয়েছেন অধিনায়ক। অন্যদিকে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে চারে নামা তাওহিদ হৃদয় এদিন শুরু থেকেই সাবলীল ছিলেন। নিজের খেলা দ্বিতীয় বলেই ৮৩ মিটার লম্বা এক ছক্কা হাকিয়েছন এই তরুণ ব্যাটার।

হৃদয় ইনিংসের শেষ ওভারে সাজ ঘরে ফেরার আগে নামের পাশে যোগ করেছেন ২৪ রান। তার ১৩ বলের ইনিংসে এক ছক্কার পাশাপাশি ৩টি চারের মার ছিল। আর সাকিব অপরাজিত থেকেছেন ২৪ বলে ৩৮ রান করে। তাদের এমন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৭ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রানে থামে বাংলাদেশ।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top