Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ হবার নয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে সেলিম ও দেলোয়ারসহ যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাঁদের রক্তের ঋণ কখনও শোধ হবার নয়। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রাম ও অনেক প্রাণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অবশেষে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। আবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের জনগণ ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে পায়।’ আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি শহিদ ছাত্রনেতা সেলিম ও দেলোয়ারের ৩৯তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ সোমবার দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের স্বৈরাচার বিরোধী মিছিলে অসংখ্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীগণ সংহতি প্রকাশ করে যোগ দিয়েছিলেন। মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিলটি শুরু হয়েছিল, যার সামনে এবং পিছনে ছিল পুলিশের ট্রাক। মিছিলটি যখন ফুলবাড়িয়ার নিকট পৌঁছায়, ঠিক তখনি স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিলের উপর অতর্কিতে পিছন থেকে ট্রাক চালিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আবাসিক ছাত্র পটুয়াখালি জেলার বাউফলের সেলিম এবং পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার দেলোয়ার। ক্ষত-বিক্ষত ও আহত অবস্থায় পড়েছিলেন অসংখ্য ছাত্র এবং আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীগণ। তাঁদের এ মহান আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের দুর্বার আন্দোলনকে আরো বেগবান করেছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনকে বিপন্ন করে বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর, তিনি শূন্য হাতে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন, যখন ব্যাংকে কোন রিজার্ভ মানি ছিল না এবং কোন কারেন্সি নোট ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক-বাহিনী ২৭৮টি রেল ব্রিজ এবং ২৭০টি সড়ক সেতু ধ্বংস করে, দু’টি সমুদ্র বন্দরে মাইন পুঁতে এবং রাস্তা-ঘাটসহ সমস্ত স্থাপনা ধ্বংস করে রাখে। তাঁর সাড়ে তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশের অর্থনীতিতে রেকর্ড ৯ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি প্রদান করে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গ্লানিকর যে ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট পাকিস্তানিদের এদেশীয় দোসরদের হাতে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তাঁর পরিবারের প্রায় সকল সদস্যসহ প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। যার ফলে বাঙালিরা তাদের আত্মমর্যাদা হারিয়েছিল, হারিয়েছিল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং সেই সঙ্গে তাদের সোনালী ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের সকল সম্ভাবনা।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর, স্বৈরশাসকেরা তাদের বুট ও বেয়নেটের খোঁচায় এদেশের মানুষের ভাগ্য লিখতে শুরু করেছিল। আমরা দু’বোন বিদেশে থাকার কারণে আমাদেরকে তারা হত্যা করতে পারেনি। দীর্ঘ ছয় বছর আমাদের বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হিসেবে অবস্থান করতে হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতা এইচ.এম. ইব্রাহিম সেলিম এবং কাজী দেলোয়ার হোসেনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আমি ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে এসেই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য লড়াই-সংগ্রাম শুরু করি। দেশে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেই। ৩০ লাখ শহিদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কত তাঁজা প্রাণ ঝরে পড়েছে হিসেব নেই।

বাণীতে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী সেলিম ও দেলোয়ারের ৩৯তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top