Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

ইসলামে শিশুর সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব

ব্যক্তির প্রথম পরিচয় নাম। ইসলামে সুন্দর নাম সন্তানের হক বা অধিকার। এ হক আদায় করতে হয় অভিভাবককে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তরবিয়তের ব্যবস্থা করা বাবার ওপর সন্তানের হক।’ (মুসনাদে বাজজার (আলবাহরুজ জাখখার): ৮৫৪০)

শিশুর সুন্দর নামের গুরুত্ব এতই বেশি যে, সুন্দর ও অর্থবহ না হওয়ায় অনেকের নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন নবীজি (স.)। নাম হবে অর্থবহ, সুন্দর, শ্রুতিমধুর ও সহজ; মন্দ অর্থবহ নাম রাখা উচিত নয়। (বুখারি: ২/৯১৪)

তাই কুৎসিত অর্থবোধক এবং আপত্তিকর নাম রেখে থাকলে তা পরিবর্তন করে দিতে হবে। যে কেউ নামের প্রস্তাব বা পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু অভিজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে অভিভাবকরা নাম গ্রহণে সিদ্ধান্ত নেবেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (স.) মন্দ ও অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিতেন।’ (জামে তিরমিজি: ২৮৩৯)

মনে রাখতে হবে, ব্যক্তির চরিত্রেও সুন্দর এবং মন্দ নামের প্রভাব পড়ে। (তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১০; ইবনুল কাইয়িম, তুহফাতুল মাওদুদ, পৃষ্ঠা-১/১২১)

নাম শুধুমাত্র দুনিয়ার পরিচিতির জন্য নয়, মৃত্যুর পরেও মানুষের নাম বেঁচে থাকে। হাদিসে বলা আছে, ‘হাশরের ময়দানে প্রত্যেককে তার নামেই ডাকা হবে’ (আবু দাউদ: ২/৬৭৬)।

একজন অপরজনের নাম সম্পর্ক অবগত হওয়া ঈমানি ভালোবাসা এবং মুসলিম ভ্রাতৃত্বের দাবি। তাই এমন নাম রাখা উচিত নয়, যা বলতে মানুষ লজ্জাবোধ করে। হাদিসে এসেছে, ‘কেউ যখন অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তুলতে চায়, সে যেন তার নাম, তার বাবার নাম ও বংশের কথা জিজ্ঞেস করে। এর দ্বারা ভালোবাসার বন্ধন আরো গভীর হয়। (জামে তিরমিজি: ২৩৯২)

এসব বিষয় বিবেচনায় রাখলে নিজ সন্তানের ক্ষতিকারক নাম রাখা কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। কাফের মুশরিকের নামানুসারে এবং বিজাতীয়দের অনুসরণে সন্তানের নাম রাখা যাবে না। হাদিস থেকে জানা যায়, নবী-রাসুলদের নাম এবং আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমানসহ আল্লাহর ৯৯ নামের আগে আব্দু যোগ করে নাম রাখা বেশি সুন্দর।

আবু ওয়াহব আল-জিশামি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা নবী-রাসুলগণের নামে নামকরণ করো। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় নাম হলো আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রাহমান। নামের মাঝে হারিস ও হাম্মাম হলো বিশ্বস্ত নাম এবং হারব ও মুররাহ হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম’ (আবু দাউদ: ৪৯৫০)। উল্লেখ্য, হারেস অর্থ, উপার্জনকারী বা কর্মব্যস্ত, আর হাম্মাম অর্থ- ইচ্ছাপোষণকারী। বুঝা যাচ্ছে, নামের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় শব্দও ইসলামে অপছন্দনীয়।

যেসব নামে বড়ত্ব ও অহংকার প্রকাশ পায় সেসব নামও অপছন্দ করতেন নবীজি (স.)। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সবচেয়ে অপছন্দনীয় হবে ওই ব্যক্তির নাম, যে মালিকুল আমলাক (রাজাধিরাজ) নাম ধারণ করেছে। (সহিহ বুখারি: ১৪০৩)

এই হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, যেসব নামে অহংকার প্রকাশ পায় সেসব নাম রাখা ইসলামসম্মত নয়। মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আতা বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম- বাররা (নেককার, ভালো মানুষ)। তখন জয়নব বিনতে আবি সালামা বললেন- আমার নাম ছিল, বাররা। নবীজি (স.) বললেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের পবিত্রতা ঘোষণা করো না (কারণ, বাররা অর্থ, ভালো, নেককার, পূত-পবিত্র)। তোমাদের মধ্যে ভালো ও পূত-পবিত্র কারা আল্লাহই জানেন। জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে তার কী নাম রাখতে পারি? তখন নবীজি বললেন, তার নাম জয়নাব রাখো। (নবীজির আদেশে তখন বাররা নাম পরিবর্তন করে তার নাম জয়নাব রাখা হলো।’ (সহিহ মুসলিম: ২১৪২)

প্রসঙ্গত, নাম সপ্তম দিনে রাখা ভালো। নবী করিম (স.) বলেছেন, ‘জন্মের সপ্তম দিন নবজাতকের নাম রাখো’ (তিরমিজি: ২৮৩২)। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘সপ্তম দিন রাসুল (স.) হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.)-এর আকিকা দিয়েছেন এবং তাঁদের নাম রেখেছেন’ (ইবনে হিব্বান: ৫৩১১)। আগে-পরে হলেও কোনো ক্ষতি নেই। জন্মের আগেও নাম নির্ধারণে বাধা নেই। (আবু দাউদ: ২/৪৪৬)

সন্তানের নাম মা-বাবার নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা জরুরি নয়, বরং নামটি সুন্দর অর্থবহ হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বংশপরিচয়ের জন্য ছেলে বা মেয়ের নামের সঙ্গে বাবার নাম বা বংশের নাম ব্যবহার করা উত্তম। বিয়ের পর নারীর নামের সঙ্গে নিজ বংশের নামের পরিবর্তে স্বামীর বংশের নাম অথবা পিতার নামের পরিবর্তে স্বামীর নাম যুক্ত করা অযৌক্তিক। নবীপত্নীরা ও সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রীরা এমনটি করেননি।

উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সন্তানের সুন্দর নাম রাখা পিতা-মাতার অবশ্য কর্তব্য। কখনো কোনো কারণে মন্দ ও অসুন্দর নাম রেখে ফেললে তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখা উচিত। এটি নবীজি (স.)-এর সুন্নত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সন্তানের হক আদায় করার এবং প্রতিটি বিষয়ে ইসলামি দিক নির্দেশনা যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top