পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ ‘সেমিফাইনাল। জিতলেই এশিয়া কাপের ফাইনাল, এমন ম্যাচে বাংলাদেশ পাচ্ছে না বোলিংয়ের সেরা অস্ত্র মুস্তাফিজুর রহমানকে। বাংলাদেশের বড় দুশ্চিন্তা ‘কাটার মাস্টারের’ অনুপস্থিতি তো বটেই। তবে কোচ হাথুরুসিংহের ল্যাপটপে বোধ হয় লাল কালিতে আরেকটি বড় দুশ্চিন্তার শিরোনাম আছে: রান-এ ব্যাটসম্যানদের অনাগ্রহ।বাংলাদেশের স্কোরে রান মন্দ উঠছে না। তবে রান মানেই তো শুধু চার-ছক্কা নয়। এখানেই একটা বড় সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ব্যাটসম্যানরা ডট বল খেলছেন বেশি। সিঙ্গেল বের হচ্ছে কম। যেন ‘দৌড়াদৌড়ি’তে তাঁদের বেশ অনাগ্রহ! এশিয়া কাপে বাংলাদেশের তিন ম্যাচেই একটি মিল খুঁজে পাওয়া গেল, মাত্রাতিরিক্ত ‘ডট’বলের সংখ্যা। প্রতিটি ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে রান নিতে পারেননি এমন বলের সংখ্যা পঞ্চাশের কাছাকাছি। ১২০ বলের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রায় অর্ধেক বলেই ব্যাটসম্যানরা রান নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অথচ ক্রিকেটের প্রথম পাঠেই লেখা আছে, ম্যাচ জেতার জন্য স্ট্রাইক পরিবর্তন করতে হবে, চার-ছক্কার মারার চেয়ে প্রতি বলে সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে বেশি।ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের দিকেই নজর দেওয়া যাক। সেদিন ১৬৬ তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ করতে পেরেছিল মাত্র ১২১। সে ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংসে ডট বলের সংখ্যা ৫৮ টি! ২০ ওভারের ম্যাচের প্রায় ১০ ওভারেই কোনো রান নিতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। সংখ্যাটি অর্ধেক হলেও সেদিন ম্যাচের ফলটা অন্যরকম হতে পারত। তার চেয়েও বড় ব্যাপার, বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিনজন আউট হয়েছেন এ রকম ‘ডট’ বলের পরের বলে। পরপর কয়েকটা ডট বল খেলে ফেললে ব্যাটসম্যানদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হয়। তখন তারা ঝুকিঁপূর্ণ শট খেলেন। উড়িয়ে মারতে চান। অনেক সময় সফল হন, অনেক সময় ব্যর্থ। স্ট্রাইক রোটেট করতে পারলে এই চাপটা তৈরি হয় না।প্রথম ম্যাচের পরাজয়ের হতাশা ঝেড়ে ফেলে বাংলাদেশ পরের দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছে। কিন্তু ‘ডট’ বলের দুশ্চিন্তা কিন্তু তারপরও যায়নি। আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম ১২ ওভারে ৮৩ করে ফেলা বাংলাদেশ ৭ উইকেট হাতে রেখেও শেষ ৮ ওভারে মাত্র ৫০ করেছিল। কারণ, মাত্রাতিরিক্ত ডট বল খেলা। আমিরাতের অপেক্ষাকৃত দুর্বল বোলিংয়ের বিপক্ষেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মোট ৫২ বলে কোনো রান করতে পারেননি। সেদিন বোলাররা সবাই নিজেদের সেরাটা দিয়েছিল বলে আক্ষেপে পুড়তে হয়নি বাংলাদেশকে।শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও সেই একই রূপ। সেদিন সাব্বির রহমানের ৫৪ বলের ৮০ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ ১৪৭ রান করেছিল। কিন্তু সেদিন বাংলাদেশের ইনিংসে ছিল ৪৯টি ‘ডট’ বল। সাব্বিরের ইনিংসটা হিসাবের বাইরে রাখলে ৬৬ বলের মধ্যে ২৯টি বলেই কোনো রান করতে পারেননি বাকি ব্যাটসম্যানরা। অন্য ব্যাটসম্যানরা মিলে মাত্র ৬৩ রান নেওয়ার পেছনে এই ২৯টি ‘ডট’ বলই রেখেছে সবচেয়ে বড় ভূমিকা।টি-টোয়েন্টিকে যতই চার ছক্কার খেলা বলা হোক, শেষ পর্যন্ত স্ট্রাইক পরিবর্তন করে এক দুই রান নেওয়ার গুরুত্ব কমছে না এতটুকু। বাংলাদেশের তিনটি ইনিংসেই সেটা প্রমাণ হয়েছে। প্রতিটি ম্যাচেই যতই ডট বলের সংখ্যা কমেছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাংলাদেশের রানও।
আজকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তাই বাংলাদেশকে ভাবতে হবে এই ‘ডট’ বল নিয়ে। বাংলাদেশকে পারবে তাদের ‘দৌড়াদৌড়ি’টা একটু বাড়াতে? আর-ইউ-এন, রান মানে কিন্তু শেষ পর্যন্ত দৌড়!
রান মানে দৌড়, বুঝতে হবে বাংলাদেশকে
Share!