পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। এ দুর্ঘটনায় দুই দিনে নারী ও শিশুসহ ৪৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। নিখোঁজদের মরদেহের অপেক্ষায় ঘটনার পর থেকেই করতোয়ার পাড়ে অবস্থান করছেন স্বজনরা। মরদেহ উদ্ধারের খবর জানতে পারলেই নদীর পাড় থেকে স্বজনরা ছুটে যাচ্ছেন স্থানীয় মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর থেকে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মোট ৪৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ও স্থানীয়রা। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা প্রশাসনের কাছে ৬৬ জনের তালিকা দিয়েছেন।
সকালে থেকে আউলিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেখানে ভিড় করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। কেউ কেউ নৌকা নিয়ে নদীতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয়জনকে। কারও হাতে নিখোঁজ স্বজনের ছবি, তা নিয়ে নদী তীরের বাসিন্দাদের দেখাচ্ছেন আর বিলাপ করছেন। এছাড়াও হাজার হাজার উৎসুক মানুষের ঢল নেমেছে নদী পাড়ে।
ষাটোর্ধ্ব কৃষ্ণ চন্দ্র রায় ভাই ও ভাতিজার খোঁজে এসেছেন আউলিয়া ঘাটে। তিনি বলেন, নদীর অপর পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজায় যোগ দিতে তার ভাই নরেশ ও ভাতিজা সিন্টু বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। নৌকাডুবির পর থেকেই এখানে আছি।
নাতির খোঁজে উপজেলার পাঁচপীর এলাকা থেকে এসেছেন বৃদ্ধ সুমল চন্দ্র। তিনি বলেন, নাতির মরদেহটা পেলে অন্তত নিজেরা সৎকারের কাজটা করতে পারতাম।
মাড়েয়া বটতলি এলাকার ধীরেন বাবুর দুই প্রতিবেশীসহ সাতজন নিকটাত্মীয় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল থেকে তিনি নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছেন।
তিনি বলেন, বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজায় যোগ দিতে ভাতিজা, ভাতিজার বউ, ভাতিজার শ্বশুর, শ্যালিকা এবং আমার ভাতিজি নৌকায় ওঠে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এখন পর্যন্ত কারও খোঁজ পাইনি। এখন তাদের লাশের জন্য অপেক্ষা করছি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে মহালয়া দেখতে আউলিয়া ঘাট থেকে বদশ্বেরী ঘাটে যাচ্ছিল নৌকাটি। নৌকায় ১০০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিল। ছাড়ার শুরুতেই নৌকাটি দুলতে থাকে। দুলতে দুলতে মাঝপথে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়।
এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, এখন পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৫টা) ৪৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকজন বাদে বাকি সবার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।